অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। তার এই ভাষণ বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।
নিচে প্রধান উপদেষ্টার সম্পূর্ণ ভাষণ তুলে ধরা হলো:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। প্রিয় দেশবাসী, দেশের সকল শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, পুরুষ, মহিলা, সবাইকে সালাম জানাচ্ছি। আসসালামুআলাইকুম।
আপনাদের সবাইকে ছাত্র জনতার বিপ্লবে সিক্ত নতুন বাংলাদেশে স্বাগত জানাচ্ছি। গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সকলের প্রতি। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়ে আমি আপনাদের কাছে কিছু কথা বলতে চাই।
স্মরণাতীত কালের ভয়াবহ বন্যায় যারা মৃত্যু বরণ করেছেন, যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বা যারা সর্বস্ব হারিয়েছেন, যারা দু:সহ জীবনযাপন করছেন তাদের স্মরণে রেখে আজকের কথাগুলি বলছি। বন্যা দুর্গতদের জীবন দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে নেবার আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতে সকল ধরনের বন্যা প্রতিরোধে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে যাতে যৌথভাবে নেয়া যায়, সে আলোচনা শুরু করেছি।
প্রিয় দেশবাসী, আপনারা জানেন বিপ্লবী ছাত্র জনতা জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে আমাকে এক গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছে। তারা নতুন এক বাংলাদেশ গড়তে চায়। নতুন প্রজন্মের এই গভীর আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেবার সংগ্রামে আমি একজন সহযোদ্ধা হিসেবে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। দেশের সকল বয়সের, সকল পেশার, সকল মতের, সকল ধর্মের সবাইকে বিনা দ্বিধায় এই সংগ্রামে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রিয় দেশবাসী, লক্ষ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এবং লক্ষ লক্ষ মা বোনের আত্মদানের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছিলাম, তা ফ্যাসিবাদ এবং স্বৈরাচারের হাতে ধ্বংস হয়ে গেছে । আপনারা দেখেছেন আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তারা কীভাবে শেষ করেছে। দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে দুর্নীতি। এমন এক দেশে আমাদের দেশ রূপান্তরিত হয়েছে যেখানে স্বৈরাচারের পিওনও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ করার মতো অকল্পনীয় কাজ করে গেছে নির্বিবাদে। শিক্ষা খাতকে পঙ্গু করে দিয়েছে, ব্যাংকিং ও শেয়ার বাজার খাতে লুটপাট, প্রকল্প ব্যয়ে বিশ্ব রেকর্ড, অবাধ সম্পদ পাচার, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে নিজ দলের পুতুলে রূপান্তর, বাক স্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার হরণ এসবই হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র । ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ফ্যাসিবাদী সরকার খর্ব করেছে জনগণের সাংবিধানিক ক্ষমতা ও অধিকার। দু:শাসন, দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার নিপীড়ন, বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যম জনসুরক্ষা বিপন্ন করেছে। জনগণকে নির্যাতন ও বঞ্চনা ও বৈষম্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের মানুষসহ কোটি কোটি মানুষের ভোটাধিকারকে বছরের পর বছর হরণ করেছে। মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথে সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে স্বৈরাচার তার নিজের, পরিবারের ও দলের কিছু মানুষের হাতে দেশের মালিকানা তুলে নিয়েছে।
প্রিয় দেশবাসী, কিন্তু এই দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েই আমাদের গড়তে হবে স্বপ্নের বাংলাদেশ। বৈষম্যহীন, শোষনহীন, কল্যাণময় এবং মুক্ত বাতাসের রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র জনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আমি তাদের সেই স্বপ্নপূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। সবাইকে এই শুভ লগ্নে তাদের স্বপ্নপূরণে সমস্ত শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।
তাদের স্বপ্ন আমাদের স্বপ্ন। জাতীয় জীবনে তরুণরা একটি মহা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমরা সবাইকে সুযোগ ব্যবহার করার কাজে এগিয়ে আসতে আহবান জানাচ্ছি। গণরোষের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকার-প্রধান দেশ ত্যাগ করার পর আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার থাকবে পুরোপুরি সুরক্ষিত। আমাদের লক্ষ্য একটিই। উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আমরা এক পরিবার। আমাদের এক লক্ষ্য। কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের স্বপ্নকে ব্যহত করতে না পারে সেজন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র দুই সপ্তাহ শেষ হলো। কর্ম যাত্রার প্রথম পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে আপনাদের কাছ থেকে যে সমর্থন পাচ্ছি সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা অনুধাবন করছি যে আমাদের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা অনেক। এ প্রত্যাশা পূরণে আমরা বদ্ধপরিকর। যদিও দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রহীনতা, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্ৰায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গিয়েছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আমরা প্রস্তুত। আজ আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করতে আপনাদের সামনে এসেছি। শুধু আমি বলবো আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এখনই সব দাবী পূরণ করার জন্য জোর করা, প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যক্তিবিশেষকে হুমকির মধ্যে ফেলা, মামলা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা, বিচারের জন্য গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে আগেই একধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবনতা তা থেকে বের হতে হবে। ছাত্র জনতার বিপ্লবের গৌরব ও সম্ভাবনা এসব কাজে ম্লান হয়ে যাবে,নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্ঠাও এতে ব্যহত হবে।
এই কার্যক্রমের জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার অতি দ্রুত “জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন” নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে এনেছে । আপনাদের সবার এবং বিদেশে অবস্থানরত ভাই-বোনদের অনুদান এই প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করেছি।
প্রিয় দেশবাসী, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, দায়িত্ব গ্রহণ করেই আমাদেরকে আইন-শৃঙ্খলা অঙ্গনে অস্থির পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থনে দেশ প্রেমিক সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজে যোগ দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকার প্রশাসনে চরম দলীয়করণ করার ফলে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আরম্ভ করেছি। তবে প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে এবং একই সাথে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সময় প্রয়োজন। সেজন্য সকলকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন জনগণের আস্থা ফিরে পায় সেটি আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।
লুটপাট ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এই খাতে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা স্থাপন, ব্যবসা বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং জনগণের জীবনযাপন সহজ করতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও মুল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আমরা উদ্যোগ সচল করেছি।
রাতারাতি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কঠিন। নড়বড়ে এক কাঠামো, আমি বরং বলবো জন স্বার্থের বিপরীতমুখী এক কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আমাদেরকে দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হয়েছে। আমরা এখান থেকেই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এ দেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সকল ক্ষমতার উৎস হয়। বিশ্ব দরবারে একটি মানবিক ও কল্যানকর রাষ্ট্র হিসেবে সমাদৃত হয়। তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও জনতার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে সফল আমাদেরকে হতেই হবে। এর আর কোনো বিকল্প নেই।
প্রিয় দেশবাসী, আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন জুলাই-আগস্ট মাসে গণ-অভ্যুত্থানে বল প্রয়োগ ও হতাহতের যে দু:সহ ঘটনা ঘটানো হয়েছে তার স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে বাংলাদেশে এসে তাদের তদন্ত শুরু করতে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তদন্তের এই প্রক্রিয়া এ সপ্তাহেই শুরু হবে। তাদের প্রথম দল ইতোমধ্যে এসে গেছে।
আমরা ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে যে শত শত মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছিলো তার অধিকাংশ প্রত্যাহার করেছি এবং আটক ছাত্র জনতার মুক্তিলাভের ব্যবস্থা করেছি। পর্যায়ক্রমে মিথ্যা ও গায়েবী সকল মামলার ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষকে দঃসহ ভোগান্তি থেকে মুক্ত করা হবে।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গণ-অভ্যুত্থানে সকল শহিদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে । সকল আহত শিক্ষার্থী ও জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী ২ জন উপদেষ্টার সহায়তায় একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে। আর্থিক খাতে সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করা হবে যা দ্রুত জনসম্মুখে প্ৰকাশ করা হবে। শেয়ার বাজার, পরিবহণ খাত সহ যে-সব ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ এবং আয়না ঘরের মত চরম ঘৃণ্য সকল অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার নিশ্চিত করা হবে। তালিকা প্রস্তুত করে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। দূর্নীতি ও সম্পদ পাচারের বিচার করা হবে।
আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জনমুখী ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিতামূলক কাঠামো সৃষ্টির লক্ষ্যে পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল সংস্থা ও জনগণের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে কমিশনের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। বাংলাদেশকে আর কোনো দিন কেউ যেন কোন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। ফ্যাসিবাদী সরকার গণমাধ্যমের ওপরও দলীয়করণ ও নির্যাতনের বোঝা চাপিয়েছিল। জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তথ্যের প্রবাহে বিদ্যমান আইনি ও অন্যান্য বাধা অপসারণ করা হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করে এমন সব আইনের নিপীড়নমূলক ধারা সংশোধন করা হবে। ইতিমধ্যে এধরনের আইনগুলো চিহ্নিত করে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
বিদেশী সংবাদ কর্মীদের এদেশে আসার উপর যে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল ইতোমধ্যে আমরা তা তুলে নিয়েছি। বিদেশি সাংবাদিকদের দ্রুত ভিসা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কর্মীরা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চালিয়ে যাবেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠিত করে গেছে বিগত সরকার। আমরা তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের উদ্যোগ নেবো। এটা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। আপনারা জানেন দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল, নিরাপদ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার। একই সাথে পাঠ্যক্রমকে যুগোপযোগী করার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে ।
গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হবে এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা খাত এবং তথ্য প্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহীতামূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।
বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। আমাদের সকল উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন।
কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক করা হবে। পর্যায়ক্রমে এটি সকল সরকারি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে প্রতিশ্রুত ন্যায়পাল নিয়োগে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হবে।
এবার কৃষি খাতের কথা একটু বলি । কৃষিখাতের কথা একটু বলি। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে কৃষকের স্বার্থ যেন স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে, কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় তা নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসী শ্রমিকেরা যেভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন ন দিয়েছেন মুক্তিকামী জনগণ তা কৃতজ্ঞচিত্রে স্মরণ করে। তাদের প্রতি সকল পর্যায়ে সম্মানজনক আচরণ নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত খাত। জনগণের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। এই খাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেখানে সরকারি ডাক্তার সহ বিশেষজ্ঞদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্য সেবা যাতে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত না থাকে, দেশের সব অঞ্চলের মানুষ সমান স্বাস্থ্য সেবা পায় সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
বর্তমান প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া পরিবর্তন বিষয়ে তারা ওয়াকিবহালই শুধু নয়, তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে তা টেকসই এবং পরিবেশ বান্ধব। প্রকৃতি ধ্বংসকারী উন্নয়ন নয়। শুধু জিডিপি একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না। নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়, বন, মাটি আর বাতাস ধ্বংস আর দূষিত করে যে উন্নয়ন হয় তা দীর্ঘ মেয়াদি টেকসই নয়। জীবাশ্ম জ্বালানি বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীদের সাথে আমাদের সরকারের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ একটি পৃথিবী রেখে যেতে কার্বন নি:সরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিকল্প নেই। আমাদের সরকার পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবে।এই কার্যক্রমে তরুণ সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা হবে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও জাতিসংঘ বর্তমান সরকারের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। আমরা সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হবে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতা। আমরা মানবাধিকার আইনসহ সকল আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের পক্ষ থেকে গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির পক্ষরাষ্ট্র হওয়া সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পক্ষভুক্ত এমন সকল আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা বাস্তবায়ন করে যাব আমাদের সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে যাবে।
আমরা জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাসী। প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐক্যর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করা হবে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সকলেই এদেশের নাগরিক এবং সমান আইনের সুরক্ষার অধিকারী। তাদের সকলের মানবিক অধিকার সহ অন্যান্য সকল অধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য আমি উপদেষ্টা পদমর্যাদা সম্পন্ন একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছি যার দায়িত্ব হবে জাতীয় সংহতি উন্নয়ন
বন্যা কবলিত এলাকার সকল মানুষের দূর্ভোগ লাঘবে সরকারের সঠিক সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারের যত কার্যক্রম আছে তাদের সচল করেছি। ইতোমধ্যে উপদেষ্টাবৃন্দ বিভিন্ন এলাকার দায়িত্ব নিয়ে এলাকায় গেছেন। আমার কার্যালয়ে একটা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। বন্যা পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য করনীয় কি স্থির করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ বিজিবি, র্যাব কে গুম, নির্যাতনের কাজে লাগিয়ে তাদের কলঙ্কিত করা হয়েছে। তারা দেশের গৌরব। তাদেরও কিছু অতি উৎসাহি সদস্যের কারনে পুরো বাহিনীকে আমরা কলঙ্কিত দেখতে চাইনা। আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে চাই এবং তাদের শাস্তি দিতে চাই। যেন ভবিষ্যতে কারো হুকুমে দেশপ্রেমিক কোনো বাহিনীর, পুলিশের, র্যাবের কোনো সদস্য হত্যাকান্ড, গুম ও অত্যাচারে জড়িত হবার সাহস না করে তাদের কাছে হুকুম যত বড় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই আসুক না কেন তারা তা উপেক্ষা করবে । ভবিষ্যতে উপরওয়ালার হুকুমে এমন ঘৃণ্য কাজ করতে বাধ্য হয়েছে এমন ব্যাখ্যা কারো কাছে গৃহীত না হয় তার ব্যবস্থা করা হবে।
আমি দেশরক্ষা বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য সকল বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি তারা তাদের মধ্যে যারা হত্যাকান্ড, গুম,খুন বা শারিরিক, মানসিক অত্যাচারে সরাসরি জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের ব্যবস্থা করতে। যারা গুম হয়েছে, হত্যার শিকার হয়েছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে। তাদের পরিবার সমূহকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। তাদের জীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো। আমি সকল দেশরক্ষা বাহিনী ও
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের উপর জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে আনতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছি।
হতে পারে না। নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়, বন, মাটি আর বাতাস ধ্বংস আর দূষিত করে যে উন্নয়ন হয় তা দীর্ঘ মেয়াদি টেকসই নয়। জীবাশ্ম জ্বালানি বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীদের সাথে আমাদের সরকারের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ একটি পৃথিবী রেখে যেতে কার্বন নি:সরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিকল্প নেই। আমাদের সরকার পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবে।এই কার্যক্রমে তরুণ সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা হবে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও জাতিসংঘ বর্তমান সরকারের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। আমরা সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হবে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতা। আমরা মানবাধিকার আইনসহ সকল আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের পক্ষ থেকে গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির পক্ষরাষ্ট্র হওয়া সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পক্ষভুক্ত এমন সকল আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা বাস্তবায়ন করে যাব আমাদের সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে যাবে।
আমরা জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাসী। প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐক্যর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করা হবে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সকলেই এদেশের নাগরিক এবং সমান আইনের সুরক্ষার অধিকারী। তাদের সকলের মানবিক অধিকার সহ অন্যান্য সকল অধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য আমি উপদেষ্টা পদমর্যাদা সম্পন্ন একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছি যার দায়িত্ব হবে জাতীয় সংহতি উন্নয়ন।
গত ১৫ বছরের দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি সাক্ষর, প্রকল্পের নামে লুটপাট ইত্যাদি তথ্য নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং ক্রে যাচ্ছি । ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ গঠনের জন্য সকল প্রকার আর্থিক ও অন্যান্য সহযাগিতার জন্য তাদেরকে অনুরোধ জানাচ্ছি। তারা এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের কাছে আমাদের প্রস্তাব সমূহ প্রণয়ন করে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদেরকেও অনুরোধ জানিয়েছি তারা যেন পরিস্থিতির কারণে অতি দ্রুত অর্থ ছাড় করার ব্যবস্থা নেন। তাদেরকেও বলেছি, যে অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি তা যেমন একটি দূর্যোগপূর্ণ সময়, তেমনি এটি জাতির জীবনে মস্তবড় সুযোগ। এই সুযোগকে যেন পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারি সেজন্য তাদের সহযোগিতা চেয়েছি।
এই গণ-অভ্যুত্থানে বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাতি তাদের অবদান বিশেষভাবে স্মরণ করবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে আমরা তাদের অংশগ্রহণ চাইবো।
আমাদের একটি লক্ষ্য হবে বিদেশগামী এবং প্রত্যাবর্তনকারী প্রত্যেক প্রবাসী শ্রমিককে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে দেশে আসা এবং যাওয়া নিশ্চিত করা। সে ব্যাপারে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিদেশে অবস্থানরত সকলের কাছে আমার আবেদন, তারা যেন তাদের উপার্জিত অর্থ অফিসিয়াল চ্যানেলে দেশে পাঠান। দেশের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে এই অর্থ বিশেষভাবে প্রয়োজন। কী কী ব্যবস্থা নিলে তাদের জন্য অফিসিয়াল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ হবে সেটা সম্বন্ধে আমরা তাদের পরামর্শ নেব৷
সারাদেশ ঘুষের মহাসমুদ্রে নিমজ্জিত। কীভাবে ঘুষ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি তার জন্য আমাদের পরামর্শ দিন। শুধু এই কাজটা নিয়ে অগ্রসর হতে পারলেই আমি মনে করি দেশের জন্য এই সরকার একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছে বলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি কথা দিচ্ছি, এব্যাপারে আমি আমার সর্বশক্তি নিয়োজিত করবো।
আমাদের দায়িত্ব দেশের সকল মানুষকে একটি পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। মতভেদ থাকবে। বাকবিতণ্ডা হবে। কিন্তু আমরা ভাই-বোন, আমরা বাবা-মা। আমরা কেউ কারো শত্রু না। কাউকে তার মতের জন্য শত্রু মনে করবো না। কাউকে ধর্মের কারণে শত্ৰু মনে করবো না। কাউকে লিঙ্গের কারণে শত্রু মনে করবো না। আমরা সবাই সমান। কেউ কারো উপরে, কেউ কারো নিচে না। এই ধারণা আমরা জাতীয় জীবনে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে
একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালইয়ে, আমার অফিসের আশেপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দু:খ- কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সকল পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিত ভাবে আমাদের দিয়ে যান । আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগত ভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করবো। কিন্তু আমাদেরকে ঘেরাও করে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে আমাদের কাজে বাধা দেবেননা। সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এসময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।
একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহবানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করবো। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে । কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়৷ দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।
আমরা ছাত্রদের আহবানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাবো যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাবো। আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করবো। কমিশনকে যে কোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখবো।
আমরা বিভিন্ন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীকে অনুরোধ করবো, একটা আলোচনা শুরু করতে আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাবো, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিক নির্দেশনা পেতে পারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে। এই দিক নির্দেশনা না-পেলে আমরা দাতা সরকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে আলোচনায় দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হতে পারছি না।