ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৩০তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। গতকাল সোমবার ভিসি হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তাকে নিয়ে অফলাইন ও অনলাইনে চলছে নানা আলোচনা। বেশিরভাগ মানুষই তার যোগ্যতার কারণে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে অনেকেই স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তারা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একজন যোগ্য ভিসি পেল। কেউ কেউ বলছেন, ঢাবি সুযোগ্য স্বৈরাচারমুক্ত ভিসি পেল।
আবার কেউ কেউ তিনি ঢাবির শিক্ষার্থী নন, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নেই, সাম্প্রতিক আন্দোলনে ভূমিকা নেই- ইত্যাদি বলে এ নিয়োগের সমালোচনা করছেন।
মঙ্গলবার পটুয়াখালী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনিও নতুন ভিসিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বলেন, অগ্নিগর্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ের শত বছরের ঐতিহ্য পদদলিত করে নতুন ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেশের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোভিসি হিসেবে কর্মরত শিক্ষককে ধরে এনে যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, আমি সেই নিয়োগ মানি না। আমি প্রতিবাদ করছি এবং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি সেই অপচেষ্টাকে যারা রমনার ঊর্ধ্বমুখী কৃষ্ণচূড়ার ছায়াঘেরা আমার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থির করার চেষ্টা করছেন।
রনির এমন স্ট্যাটাসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নেটিজেনরা। কমেন্টবক্সে তারা রনির মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। অনেকেই তাকে স্বৈরাচারের দোসর বলে অভিযুক্ত করেন। কেউ কেউ বলেন, রনি লীগের সাবেক এমপি, মানুষ সেটা ভালো করে জানে। তিনি আসলে দলত্যাগ করলেও আদর্শ ত্যাগ করতে পারেননি। অনেকেই বলেছেন, রনি আওয়ামী লীগই রয়ে গেলেন। মানুষ হতে পারেনি। অনেকেই আবার রনিকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ড. ফয়জুল হক নামে এক ব্যক্তি বলেন, নতুন ভিসিকে আন্তরিক অভিনন্দন। এই প্রথম একজন যোগ্য মানুষ সঠিকভাবে মূল্যায়িত হওয়ায় বাংলার সব ছাত্র-জনতা আনন্দিত। দেশ ও মানবতা এগিয়ে যাবে সেই প্রত্যাশা করছি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ও সেনাপ্রধানকে আন্তরিক ধন্যবাদ। বর্তমান এই সরকারই দেশবাসীর সরকার।
মেহেদি হাসান লিখেছেন- পরিবর্তন যদি ভালোর জন্য হয়, তবে সেই পরিবর্তনকে আমরা স্বাগতম জানাই।
রাকিবুল আহসান মিনার বলেছেন, অক্সফোর্ডসহ বিশ্ববিখ্যাত সব ইউনির্ভাসিটি ও ইনস্টিটিউট থেকে শিক্ষা লাভকারী ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানকারী মানুষটা অযোগ্য, আর দলীয় চাটুকারদের নিয়োগ দেওয়া ছিল যোগ্যতার পরিচয়? আপনার এ মায়াকান্নার অদৃশ্য পানিতে আপনার মুখোশই ধুয়ে যাচ্ছে! আপনার মানসিক সেই আওয়ামী নগ্নতা প্রকাশিত হতে শুরু করেছে।
জাকির হোসাইন বলেছেন, একজন ভালো মানুষ যে কোনো জায়গা থেকে আনা যায়।
মোহাম্মদ শফিকুল্লাহ বলেছেন, আগের চা-সমুচা আর সিঙ্গারা বিক্রেতা যারা ভিসি ছিল তাদের নিয়ে কোনো মুখ খুলেননি! আজকে স্বাধীনভাবে মুখ খুলছেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, আপনার রাগ অভিমানের জন্য অতীতেও কারো ক্ষতি হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।
আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের লিখেছেন, ঢাবির ইতিহাসে সেরা ভিসি পেতে যাচ্ছে দেশবাসী, ইনশাআল্লাহ।
আতিকুল্লাহ হিল আশরাফি বলেছেন, ঢাকা ভার্সিটিতে গণহত্যায় এরকম হম্বিতম্বি করে কথা বলার তো দুঃসাহস দেখি নাই ভাই আপনার।
সোহেল রানা বলেছেন, উনাকে অ্যানালাইসিস করে দেখছি উনি নেতা হতে চান। বৃষ্টির দিকে ছাতা সর্বদাই প্রস্তুত রাখেন তিনি। তিনি প্রতি মুহূর্তে নিজের বক্তব্য পরিবর্তন করেছেন।
মোহাম্মদ জিয়াউর রাহমান লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে নিয়ে সরকারের কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা সবাই গণভবনে যাত্রা করতেন। তখন আপনার ঐতিহ্য কোথায় ছিল।
সোলায়মান হোসাইন লিখেছেন, এই মুখোশ পরা লীগটাকে বিএনপি থেকে আলাদা করা দরকার।
মিজানুর রহমান লিখেছেন, ভাই আদা পচলে ঝাল থাকে, ব্যক্তিত্ব নষ্ট হলে কিছুই থাকে না।
নাজিম উদ্দিন লিখেছেন, দীর্ঘদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একজন যোগ্য উপাচার্য পেয়েছে। অভিনন্দন নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস সোয়ানসি, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ ও গবেষণা করা অধ্যাপক খান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে একাডেমিক ও কার্যকরী ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্টের উন্নয়নে অবদান রাখছেন।
তারেক আহমেদ খান লিখেছেন, দলীয় প্রভাবমুক্ত ভিসি ছাত্র-জনতার পছন্দ।
মমিনুর রশিদ লিখেছেন, যতকিছুই হোক, রনি ভাই কিন্তু আওয়ামী লীগকে মিস করেন। কারণ তিনি কট্টর আওয়ামীপন্থি।
এএম জোবায়ের লিখেছেন, আপনার এই আবেদনটা আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম। আমার মনে হয় সর্বকালের সেরা ভিসি পেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অভিনন্দন নতুন ভিসি স্যারকে।
মো. হেলাল উদ্দিন লিখেছেন, যদি যোগ্য হয় তাহলে সমস্যা কোথায়?
শাকিব উদ্দিন লিখেছেন, যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিলে এত জ্বলে কেন?
রনিকে ট্যাগ করে মুফতি আলাউদ্দিন বলেছেন, একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি, এ দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন আপনারা। কঠিন হাশর ময়দানে এর জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে।
নুরুদ্দিন রিয়াজ বলেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন ছাত্র-জনতা, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কে ভিসি পদে থাকবে আর কে নিয়োগ পাবে। আপনি মানার কে? আর না মানারই বা কে? আপনি আওয়ামী লীগই রয়ে গেলেন। মানুষ আর হতে পারলেন না।
ইমাম হোসাইন হৃদয় লিখেছেন, শাহবাগ খোলা আছে, আন্দোলন করুন। হাসিনার সময় তো নামেন নাই, এখন নামুন, পোলাপান উত্তম-মাধ্যম দিয়ে দেবে।
আবু তাহের তালুকদার লিখেছেন, আপনে যে লীগের সাবেক এমপি, সেটা মানুষ ভালা করি জানে।
ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব বলেছেন, আপনি কিন্তু এক সময়ের স্বৈরাচারের দোসর।
হেলাল শাহাদাত লিখেছেন, আপনার কু-চেহারা, ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী প্রেতাত্মা হিসেবে আপনার পরিচয় আবার প্রকাশ হলো শান্তিপ্রিয় জাতির সামনে।
রেদওয়ান চৌধুরী লিখেছেন, আপনে পল্টি মারবেন, সেটা জানি; কিন্তু এত তাড়াতাড়ি পল্টি মারবেন, সেটা তো জানতাম না।
গাজী ইকবাল হোসাইন লিখেছেন, আপনার কথায় সবাই হাসি রিয়্যাক্ট দেয়, আপনার রক্তে তো আওয়ামী মিশে আছে। আপনার শরীর থেকে আওয়ামী গন্ধ আসে।
মাকসুদ হোসাইন লিখেছেন, আপনার জন্য আওয়ামী লীগ ঠিক আছে, সেখানেই ফিরে যান আপনি।
এসকে মাসুদ রানা লিখেছেন, সম্ভবত আপনার স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে।
নতুন ভিসিকে নিয়ে মাহবুব বিন মালেক লিখেছেন, উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, এখনো আছেন। লিয়েন বা ছুটি নিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছিলেন। এখানে কিসের সমস্যা? এভাবে তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকই বিভিন্ন জায়গায় পড়ান। এর কারণে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না, এমন বিবেচনা আপনি করলেন কী করে? আপনার কাছ থেকে এটা আশা করিনি। আর আপনাদের যদি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক টাইপ, যে কিনা ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স করে পরে ঢাবির প্রাইভেট প্রোগ্রাম থেকে মাস্টার্স করে ঢাবির ভিসি হয়েছিলেন, সেই ভিসি বেশি ভালো লাগে, তাহলে আপনাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা।
আরিফ আল মামুন লিখেছেন, আপনি যেহেতু বিরোধিতা করছেন সুতরাং ভিসি নিয়োগ সঠিক হয়েছে।
মো. কামাল উদ্দিন বলেছেন, আপনার বক্তব্যে অনেকে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজতো, তাদের সঙ্গে সব সময় আপনার পক্ষ হয়ে প্রতিবাদ করতাম, আজকের পর বুঝলাম আসলেই আপনি ষড়যন্ত্রকারী। আপনি ঢাকা কলেজের বিএ পাশ লোককে মানবেন, যদি আপনার দিদি নিয়োগ দেয়; কিন্ত এই সরকার অক্সফোর্ডের সেরা এনে নিয়োগ দিলেও আপনার ভালো লাগবে না। এটার কারণ আপনি বুবুর লোক। উনি বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সেরা সাবজেক্ট উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন, সেই তথ্য না দিয়ে তথ্য বিকৃত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করা দুরভিসন্ধিমূলক। আমরা আপনার এ জঘন্য অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এই পোস্ট প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
মাকসুদুর রহমান বলেছেন, আপনি আসলে দলত্যাগ করলেও আদর্শ ত্যাগ করতে পারেননি।
মো. বিপ্লব বলেছেন, চাটাচাটি করা যাবে না। এজনই কি ভিসি হিসেবে উনাকে মানতে পারছেন না?