কুমিল্লায় মাত্র ১১ বছরে শূন্য থেকে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক বনেছেন সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মো. কামাল হোসেন। একজন কৃষকের ছেলে কামাল এক সময় তার পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাতেই হিমশিম খেতেন। হঠাৎ তার এমন বিত্তশালী হওয়া রূপকথার গল্পকেও যেন হার মানায়। স্থানীয়দের দাবি, মূলত তাজুল ইসলামের কমিশন বাণিজ্যের হোতা ছিলেন কামাল। এছাড়া টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, সালিশ বৈঠক, ঠিকাদারি কাজে অনিয়ম, থানায় তদবিরসহ নানা অপরাধ-দুর্নীতিতেও জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান কামাল।
জানা যায়, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদের ছেলে কামাল হোসেন। কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসে এক দালালের সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন। ১১ বছর আগে তৎকালীন কুমিল্লা-৯ আসনের সংসদ-সদস্য তাজুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। ব্যাপক চাটুকারিতার মাধ্যমে তাজুলের বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন কামাল। নিজেকে তাজুলের ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৮ সালে তাজুল স্থনীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে কামালকে মন্ত্রীর উন্নয়ন সমন্বয়কারী হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় সদর আসনের সংসদ-সদস্য বাহাউদ্দিন ও তার মেয়ে সাবেক কুমিল্লা সিটি মেয়র তাহসিন বাহার সূচনার সঙ্গেও কামালের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কামাল কুমিল্লা এলজিইডি অফিসের টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ, ঠিকাদারি, মন্ত্রীর কমিশন বাণিজ্য এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ফুলে-ফেঁপে উঠতে থাকেন। মাস্টার এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের এলজিইডির বেশিরভাগ ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতেন তিনি। কোটি কোটি টাকার কাজ কমিশন নিয়ে সাব কন্ট্রাক্টে বিক্রি করে দিতেন।
তার মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ম-দুর্নীতি দৃষ্টিগোচর হলে দুদক তার বিরুদ্ধে মামলাও করে। ৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর দুদক কুমিল্লার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে তার নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৫ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। দুদক সূত্র জানায়, তার পারিবারিক ব্যয়, পরিশোধিত কর ও অপরিশোধিত দায়সহ ১৭ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ২৬ টাকার নিট সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ২০ লাখ ২১ হাজার ৮০ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া গেছে। আর ৮ কোটি ৯৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৬ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কুমিল্লার আদর্শ উপজেলায় তার নামে ১০ তলায় দুটি ফ্লোর ও ছয়তলা ভবন, কুমিল্লা সদরসহ বিভিন্ন জায়গায় ৫০০ শতাংশ জমি, টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়ি এবং ব্যাংকে গচ্ছিত ৮ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, কামালের বিপুল সম্পদের সিকিভাগও দুদকের তদন্তে আসেনি। কামাল কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হলেও দুদক এসব সম্পদ খুঁজে বের করতে পারেনি। তার কুমিল্লার হাউজিং এস্টেটের একাধিক বাড়ি, কান্দিরপাড় এলাকায় বিগ বাজার সুপার মার্কেট, একই এলাকায় অনেকগুলো ফ্ল্যাট, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও প্লট এবং কৃষি ও অকৃষি জমির তথ্য বের করতে পারেনি দুদক। মূলত সাবেক মন্ত্রীর চাপে দুদক তখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি বলে অভিমত তাদের। স্থানীয়রা আরও জানান, শুধু কুমিল্লা শহরেই কামালের ২শ থেকে ৩শ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তারা তার এসব অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
মনোহরগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, কামাল কৃষকের ছেলে। ঠিক মতো খেতেও পারতেন না। তিনি এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক। দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করলেও সম্পদের সিকিভাগও বের করতে পারেনি। তার দৃশ্যমান কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
দুদক কুমিল্লার উপ-পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, ঠিকাদার কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে তার দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। তার বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কামাল হোসেনের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও আত্মগোপনে থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.