জমির মালিকদের ‘ভূমি মালিকানা সনদ (সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ-সিএলও)’ দেবে সরকার। কিউআরকোড বা ইউনিক নম্বরসংবলিত এই ‘ভূমি স্মার্ট কার্ড’ বা সনদই ভূমির মালিকানা নির্ধারণে চূড়ান্ত দলিল বলে গণ্য হবে। ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) দিতেও ব্যবহার হবে এই কার্ড। কোনো কারণে টানা তিন বছর কেউ খাজনা না দিলে তার জমি বাজেয়াপ্ত ও খাস করা হবে। এ ছাড়া জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কারও জমি অবৈধভাবে দখল করলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এসব বিধান রেখে ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) মো. খলিলুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই আইনের অধীনে সরকার প্রত্যেক জমির মালিককে ‘ভূমির মালিকানা সনদ’ দেবে। ভূমির মালিকানা নির্ধারণে এই সনদ চূড়ান্ত দলিল হিসেবে গণ্য হবে। এই সনদের মাধ্যমে সহজেই ওই জমিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা যাবে। ভূমির ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আইনের খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, অনুমোদনের জন্য শিগগির খসড়াটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। এই আইন তিন পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, জমি হস্তান্তরের পর নামজারির মাধ্যমে রেকর্ড হালনাগাদ করা বা সিএলও বা সনদ তৈরি করে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে।
মালিকানা ও স্বত্ব পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভূমির মালিকানা সনদও নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে। এর জন্য সরকারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হবে জমির মালিককে। ভূমি হস্তান্তর দলিল বা ওয়ারিশান বা আদালতের আদেশ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের আদেশে স্বত্ব ও মালিকানা প্রতিষ্ঠার পর বা জরিপে প্রণীত রেকর্ডের পর বিদ্যমান আইনে ভূমির স্বত্ব ও মালিকানা প্রতিবছর নবায়ন করার বিধান না থাকায় খাজনা পরিশোধের বিনিময়ে যে দাখিলা দেওয়া হয়, তা মালিকানার ধারাবাহিকতা বহাল থাকার অফিশিয়াল প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।
খসড়ায় কৃষিজমি অধিগ্রহণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের জরুরি উন্নয়নমূলক কাজে কৃষিভূমির প্রয়োজন হলে অপেক্ষাকৃত অনুর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে। দুই বা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। জনস্বার্থে প্রয়োজন হলে দুই বা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। জমি দুই না তিন ফসলি, তা নিয়ে মতভেদ দেখা দিলে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত কমিটি সিদ্ধান্ত দেবে।
ভূমির শ্রেণিবিন্যাস প্রসঙ্গে খসড়ায় বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট ইমেজ ধারণের মাধ্যমে সরকার ভূমির ব্যবহারভিত্তিক অঞ্চল নির্ধারণ করে ডিজিটাল ম্যাপ প্রণয়ন করবে। জমির ব্যবহারভিত্তিক মাটির গুণ, প্রকৃতি ও ব্যবহার বিবেচনায় কৃষি, অকৃষি, আবাসিকসহ ভূমির নানা শ্রেণিবিন্যাস করা হবে। সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। তবে ব্যক্তিমালিকানার জমির এক বিঘা পর্যন্ত শ্রেণি পরিবর্তনে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হবে না। এর ব্যত্যয় হলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, অঞ্চলভিত্তিক ডিজিটাল ম্যাপ অনুযায়ী কৃষিজমি সরকারের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। যেকোনো শিল্পকারখানা, সরকারি-বেসরকারি অফিস ভবন, বাসস্থান এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত অনুর্বর কৃষিজমি ব্যবহার এবং ভূমির সর্বোচ্চ ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে। কৃষিজমি সুরক্ষা দিতে গ্রামাঞ্চলে বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করতে সহজ শর্তে গৃহঋণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেলে পক্ষরা আলোচনা বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যস্থতায় বাজারমূল্যে ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে ন্যূনতম চলাচলের পথ দিতে হবে। কোনো পক্ষ রাজি না হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হবে।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.