গণঅভ্যূত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এসব বিষয় নিয়ে এত দিন চুপ ছিলেন তিনি।
আজ বুধবার ‘নাগরিক টিভি’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে হারুন অর রশীদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘আমাকে নিয়ে মিডিয়াতে তো প্রতিদিন একেক রকম খবর আছে। কাল দেখলাম এক অনলাইনে আসছে, আমি আর আমার বউ নাকি আছি ভাটিরচর। একটায় দেখলাম আমি নাই। আবার এক জায়গায় দেখলাম, আমি আছি কারও হেফাজতে। আবার আরেকটায় বলেছে, আমি অন্য জায়গায় চলে গেছি।
গতকাল আবার দেখলাম র্যাব বলেছে, আমি নাকি তাদের হেফাজতে আছি। একেকজন একেক ধরনের কথা বলছে। আমি আসলে কারও সঙ্গে কথা বলি না। আমি বলছি, আমি আছি, আমি সেইফ আছি।’
হারুন অর রশীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কোথায় আছেন—সেটা কি বলতে চাচ্ছেন না? জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে আপনি জানেন যে, কোথাও যেতে গেলে তো লিগ্যালি এই সময় কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। লিগ্যালি আমার যাওয়া কি সম্ভব?’
কর্মস্থলে কেন যোগ দেননি–এ বিষয়ে হারুন বলেন, ‘যখন বিভিন্ন ধরনের কথা ছড়ানো হলো যে, একে মেরে ফেলেছে, ওকে মেরে ফেলেছে। তখন আমি কোনো মন্তব্য করিনি। যখন সরকার থেকে বলা হলো যে, যোগদান করার জন্য তখন আমি রিং দেই (ফোন করি)। তখন আমি যোগদান করার জন্য যাই। আমার… বলি, তুমি আমার যোগদানের পত্র লেখ আমি আসতেছি।
এটা ৭ অথবা ৮ তারিখ হবে। আমি যাব রওনা দিয়েছি। কমিশনারের খোঁজ নিলাম, তিনি অফিসে নেই। তখন আমি তাকে রিং দিলাম। আমি বললাম, “স্যার আমি তো আসতেছি, আমি যোগ দেব।” তখন তিনি বললেন, ‘‘এখন আইসেন না। যেখানে আছেন সেখানে সেইফ থাকেন। আমি বললে আইসেন”।’
ডিবির সাবেক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমি তো বলি নাই যোগদান করার জন্য আমি যাই নাই। আমি তো যোগদান করার জন্য গেছি। কমিশনার সাহেব তো আছেন, তিনি ভালো মানুষ, তাকে জিজ্ঞাসা করেন। উনাকে আমি রিং দিয়েছি কি না। আমি জয়েন্ট করতে চেয়েছি কি না। তার দুই দিন পর দেখেছি, আমার নামে মামলা হয়ে গেল মোহাম্মদপুর থানায়।
কি মামলা হুকুমের মামলা। সেই মামলায় প্রধানমন্ত্রী (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ওবায়দুল কাদের, আইজিপি, কমিশনার এরপর আমি। সেসময় আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি ডিবিতে কাজ করি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের নির্দেশ দেন। তারপর আমরা কাজ করি।’
তিনি বলেন, ‘এরপর এক উপদেষ্টা বলল, যারা এখনো জয়েন্ট করেনি পাবলিক তাদের ধরে নিয়ে আসেন। আমি আরও অবাক হলাম, যদি চাকরিতে জয়েন্ট না করি তাহলে আমাকে আপনি প্রসিডিং করবেন। এখন যদি আমাকে ধরে নিয়ে আসেন, তাহলে আমাকে জোড় করে চাকরি করাবেন। এগুলো শোনার পর আমার মনে হলো, আসলে আমার জন্য রিস্ক।
আমি সেইফ না, আমার লাইফটা ঝুঁকির মধ্যে। আগে তো মানুষকে বাঁচতে হবে। এখন মানুষকে ধরে যেভাবে মারা হচ্ছে, ডিম মারা হচ্ছে। এতে আমি মনে করলাম, আমাকে তো বাঁচতে হবে। তাই আমি ইচ্ছাকৃতভাবে একটু চুপ আছি।’ উৎস: দৈনিক আমাদের সময় ও নাগরিক টেলিভিশন