রাষ্ট্রপতির সঙ্গে হাসিনার সম্পর্ক যে কারণে খারাপ হয়েছিল

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। শোনা যায়, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই তাকে বেছে নিয়েছেন। তবে নিয়োগ পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এমনকি দেখা-সাক্ষাৎ ও পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাদের।

এনিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিকের রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’-এ।

এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত দু’টি বিষয় নিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দুজনের মধ্যে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ ও শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে বঙ্গভবন আর গণভবনের মধ্যে চিঠি চালাচালিও চলছিল। রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে দেশে ফেরার পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা যায় চীন ও ভারত সফরের পর। সম্পর্কের অবনতি এমনটাই ঘটেছিল যে, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনের দিকে পা-ই বাড়াননি।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এই যখন অবস্থা, তখনই বিচারক নিয়োগের প্রশ্নটি সামনে আসে। গণভবন বা আইন মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা দেখে রাষ্ট্রপতি বিরক্ত হন। ১৮ই এপ্রিল ২০২৪ রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে সামগ্রিকতা নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া উল্লেখ রয়েছে। নিয়োগের পদ্ধতি স্পষ্ট না থাকায় দীর্ঘদিন থেকে প্রথাগতভাবে নিয়োগ হয়ে আসছে। বিষয়টি লিখিত না থাকলেও আলোচনাক্রমে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শ করার নিয়ম চালু আছে। রাষ্ট্রপতিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এই নিয়ম ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বঙ্গভবনে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। সারসংক্ষেপ বহনকারী ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য চাপ দিতে থাকেন। এতে বিরক্ত হয়ে রাষ্ট্রপতি পাল্টা একটি চিঠি পাঠান সই না করেই। এতে তিনি বলেন, যেভাবে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে তাতে রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি লেখেন, ‘আমি কিছুই জানি না, অথচ আমাকেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে। প্রচলিত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতিকেই পুতুল বানানো হয়েছে। শুধুমাত্র আমার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কেন? দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া উপেক্ষা করার কী অর্থ আছে’।

আইনমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শ করারও প্রয়োজন মনে করেননি। সবমিলিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্যথিত হন-এটাও উল্লেখ ছিল চিঠিতে। এই চিঠির অনুলিপি দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর দপ্তরে।

ওদিকে প্রচলিত শ্রম আইন নিয়েও ভিন্নমত দেখা দেয়। আলোচনা না করে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এতে রাষ্ট্রপতি মনঃক্ষুণ্ন হন। এতে করেই বঙ্গভবন ও গণভবনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। সম্ভবত এসব কারণেই হাসিনা ৫ আগস্ট ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে টেলিফোনেও কোনো যোগাযোগ করেননি।

এর আগে, গত অক্টোবরের মাঝামাঝিতে মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপ্রধান দাবি করেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। তবে তার কাছে এসংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। অবশ্য সাহাবুদ্দিন এ-ও বলেন, ‘এ বিষয়ে আর বিতর্কের সুযোগ নেই। শেখ হাসিনা চলে গেছেন এবং এটাই সত্য। ’

সেই সাক্ষাৎকার গত ১৯ অক্টোবর মানবজমিন পত্রিকার পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়। যা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা তৈরি হয়। এবার ‘জনতার চোখ’-এ চমকে দেওয়ার মতো এই খবর প্রকাশ হলো।