শেষ হয়ে যাচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর। রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের ইজতেমা। বিভিন্ন ইস্যুতে চলতি বছরের ইজতেমা নিয়ে ছিল নানা আলোচনা। সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন ইতিহাসও। যেসব কারণে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এবারের ইজতেমা তা যুগান্তরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
ময়দান দখল নিতে সংঘর্ষ
গত ডিসেম্বরে ইজতেমা শুরুর আগেই ময়দান দখল নিতে সংঘর্ষে জড়ায় মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেই সংঘর্ষে প্রাণ হারায় চার মুসল্লি। ইজতেমা শুরুর আগে ময়দানে প্রাণহানির ঘটনাটি প্রথমবারের মতো হয়েছিল। পাশাপাশি ময়দানে সংঘর্ষের ঘটনাটিও প্রথম।
ওই সময় পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে পাঁচদিন ইজতেমা করতে চান মাওলানা সাদের অনুসারীরা। মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা তাদের এখানে ইজতেমা করতে দিতে চান না। এ জন্য আগে থেকে ইজতেমা মাঠ দখলে নেন জুবায়ের অনুসারীরা। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এক পর্যায়ে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়।
প্রথমবারের মতো তিনটি আখেরি মোনাজাত
২০১১ সালের আগে ইজতেমার কোনো পর্ব ছিল না। বছরে একবারই হতো ইজতেমা। মুসল্লিদের মতবিরোধের ২০১১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্ব ইজতেমাকে দুই ভাগে ভাগ করে প্রথম বিভক্তির জন্ম দেয়। এরপর থেকেই দুই পর্বে হয় ইজতেমা। হতো দুটি আখেরি মোনাজাত। কিন্তু চলতি বছরে হয়েছে তিনটি আখেরি মোনাজাত।
দুই পর্বের ইজতেমা হলেও নিজেদের পর্বকে দুই ধাপে করেছেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। সেই দুই ধাপে হয়েছে দুটি আখেরি মোনাজাত। আর রোববার মাওলানা সাদের অনুসারীরা করবে আরেকটি মোনাজাত। এর ফলে এক বছরে হবে তিনটি আখেরি মোনাজাত।
সাধারণ মুসল্লিদের মতে, তিনটি নয়, তারা একটি আখেরি মোনাজাত করতে চান। তারা বলছেন, এভাবে যদি আখেরি মোনাজাত বাড়তে থাকে তবে এমন সময়ও আসতে পারে যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইজতেমা নিয়ে আগ্রহ কমে যাবে। তাই আর আখেরি মোনাজাত সংখ্যায় না বাড়িয়ে একটি আখেরি মোনাজাতের ব্যবস্থা করা উচিত।
শবে বরাত
শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। এবারের ইজতেমায় পড়েছিল শবে বরাত, যা কি না ইতিহাসে প্রথম। সেদিনে ইবাদতের জন্য ইজতেমা ময়দানে ভিড় করে মুসল্লিরা। পাশাপাশি শাবাস মাসের রোজাও রেখেছিল মুসল্লিরা। ইজতেমা ময়দানে দুদিন রোজা রেখে ও ইফতার করে নতুন ইতিহাসের জন্ম দিল মুসল্লিরা।
গত ৩১ জানুয়ারি জুবায়ের অনুসারীদের মাধ্যমে ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়। ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ। ৫ ফেব্রুয়ারি হয় প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত। আর সবশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়, যাতে অংশ নেয় সাদ অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম। চলতি বছরের পর থেকে তুরাগ নদের তীরে আর ইজতেমা করতে পারবে না সাদপন্থিরা।