“আছিয়া রে! ও আমার বোনরে! তুই কেন চলে গেলি!” বিলাপ করে এমন সব কথা বলছে আছিয়ার ছোট্ট বোন; আহাজারি করছে স্বজনরা। কাঁদছে প্রতিবেশীরাও। চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না কেউ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শোকাহত মানুষ জড়ো হয়েছে মাগুরায়। তারা আছিয়ার শেষযাত্রায় সমবেত হয়েছে। তাদের সম্মিলিত কাঁধে চড়ে বাংলাদেশের হৃদয় ছিড়ে কফিনবন্দি হয়ে চিরবিদায় নিয়েছে আছিয়া। সবুজ বাংলার লাল হৃদয়ে আরেকটি রক্তাক্ত দাগ এঁকে দিয়ে চলে গেছে মেয়েটি। আছিয়ার দাফন হয়েছে।
১৩ মার্চ সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে আছিয়ার মরদেহ মাগুরার স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর আগেই সেখানে হাজারো মানুষ জড়ো হয়। আছিয়ার কফিন হেলিকপ্টার থেকে নামানোর পর কফিন নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। মাগুরার নোমানী ময়দানে জানাজা শেষে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় দাফনের জন্য।
মাগুরার নিভৃত গ্রামের ছোট্ট আছিয়া আজ পুরো বাংলাদেশের হৃদয়ে ব্যথা জাগিয়ে তুলেছে। এমন বিদায় যেন আর আর না হয়, কাউকে এমন বিদায় না দিতে হয়; সেই প্রত্যয়ও শোনা গেছে রাজপথে, সরকারে ও জনমনের ভেতরে-বাহিরে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে হার মেনেছে ছোট্ট আছিয়া। সে হার মানলেও তার বাকি লড়াই রেখে গেছে বাংলাদেশের জন্য, বাকি মেয়ে জগত ও নারী সমাজের জন্য; ভবিষ্যৎ বাংলাদেশর জন্য।
সন্ধ্যার দিকে মাগুরায় পৌঁছায় শিশু আছিয়ার মরদেহ। ইফতারের আগে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে তার লাশ মাগুরায় নেওয়া হয়। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় মাগুরার নোমানী ময়দানে শিশুটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার জানাজায় ঢল নামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নেওয়া শোকাহত মানুষের।
জানাজার পর আছিয়ার লাশের খাটিয়া ঘাড়ে করে নিয়ে যান জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। সাথে ছিলেন নেতাকর্মীরা।
এরআগে শিশুটির জানাজায় অংশ নিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বিকালে মাগুরা পৌঁছান। র্যাব-পুলিশের একটি হেলিকপ্টারযোগে তারা বিকাল ৫টার দিকে মাগুরা স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মাগুরা শহরে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় শিশু আছিয়া। পরদিন তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এরপর গত শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে গত শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ) থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন রবিবার (৯ মার্চ) শিশুটিকে সিএমএইচে পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে নেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
শিশু আছিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, প্রধান উপদেষ্টা নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.