যখনই কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে তখনই একেকটা বিশ্বরেকর্ড হয়েছে পদ্মাসেতুতে। নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, এতো সংখ্যক রেকর্ড হয়েছে, তা এখন পর্যন্ত তালিকা করে শেষ করা যায়নি। যার কয়েকটি এরইমধ্যে ‘গিনেজ বুক অব ওর্য়াল্ড’ এ স্থান করে নেবার পথে।
নির্মাণযজ্ঞের শুরুতে নানা কারণে দেশে-বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল পদ্মাসেতু। আর এই সেতুটি এরইমধ্যে অনেকগুলো বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেছে। এই যেমন খড়স্রোতা পদ্মায় গভীরতম পাইলিং করা, ১০ হাজার টনের বেশি ওজনের ব্যায়ারিং ব্যবহার করা, নদী শাসনের সবচেয়ে বড় চুক্তি করা, সবচেয়ে বড় ক্রেনের ব্যবহার। পদ্মাসেতুর ইতিহাসের সাথে এই বিশ্বরেকর্ডগুলো দীর্ঘদিন মানুষের আলোচনার খোড়াক যোগাবে।
যখন সেতুটির নির্মাণ শুরু হয় তখন অনাস্থা, অবিশ্বাস, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের কোনো ঘাটতি ছিল না। এখন, মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে গর্বের জাতীয় স্থাপনাটি। দেশ-বিদেশ সবার মুখে এখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ পদ্মাসেতু।
শুরুতে পাইলিং জটিলতায় দীর্ঘ সময় আটকে থাকে সেতুর নির্মাণযজ্ঞ। তবে, ১শ’ ২০ থেকে ১শ’ ২৭ মিটার গভীর পাইলিং করে এরইমধ্যে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে পদ্মাসেতু।
পদ্মাসেতু প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, “এতবড় নদীতে কখনই ব্রিজ হয়নি। এত খড়স্রোতা, যে নদীতে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০ হাজার কিউবিক মিটার প্রতি সেকেন্ডে পানি যায় এরকম নদীতে ব্রিজই করা হয় না। ৬২ মিটার পাইল কোন লোড নিতে পারবে না, যেটা অন্য কোন ব্রিজে চিন্তাই করা যায় না। ৪ হাজার টনের জাহাজ ধাক্কা দিলে কিছু হবে না।”
পাইল বসাতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১ হাজার ৯শ’ থেকে সাড়ে তিন হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হাইড্রোলিক হ্যামার ব্যবহৃত হয়েছে।
নদীর তলদেশে শক্তি বাড়াতে ও দৃঢ় করতে গ্রাউন্ডিং ইনজেক্ট স্কিন ফিকশন প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে পদ্মায়। এমন পাইলের সংখ্যা ২২টি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল আমিন বলেন, “পদ্মাসেতু থেকে যা শিখেছি পরবর্তীতে অন্যান্য সেতুতে তা ব্যবহার করতে পারবো। ১২০ থেকে ১৩০ লিটারের বেশি পদ্মা নদীর বালি স্তরে পাইল ড্রাইভ করা সম্ভব না পৃথিবীর শক্তিশালী হ্যামার দিয়েও।”
পরের রেকর্ডটি হয়েছে নদীশাসনে। মাওয়া-জাজিরা মিলিয়ে মোট ১৪ কিলোমিটার নদীকে শাসন করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এই তিন জেলায় এই নদীশাসনে ৯ হাজার ৪শ’ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে।
রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পও অনায়াশেই সহ্য করার ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ ব্যবহার হয়েছে পদ্মায়। এর সক্ষমতা ৯৮ হাজার ৭শ’ ২৫ কিলোনিউটন ক্ষমতা। আবার, স্প্যান ও পিলারের মধ্যে বিয়ারিং ব্যবহার হয়েছে। এর একেকটির ক্ষমতা সাড়ে দশ হাজার মেট্রেকটন।
পদ্মাসেতু প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, “অনেক কিছুই এখানে আছে যা বলতেও ভুলে যাচ্ছি, হয়ত আরও সময় লাগবে। কি কি রেকর্ড করেছে যা বলা হয়েছে, আরও জিনিস আছে। এখন যেটা জানাচ্ছি সেটা হয়তো আংশিক।”
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেনের ব্যবহার হয়েছে স্প্যানগুলো বসাতে। দ্বি-তল পদ্মা সেতুর উপরের সড়ক কংক্রিটের ঢালাই। নিচের স্প্যান হলো স্টিল মেগা স্ট্র্যাকচার। এক সেতুতে কংক্রিট ও স্টিল- দুইয়ের ব্যবহার সাধারণত একসাথে দেখা যায় না।