‘সুমধুর কণ্ঠ, যেন বেহেশত থেকে আসছে’

দেশবরেণ্য সংগীতজ্ঞ, শিল্পী, সুরকার, সংগ্রাহক, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসীর প্রয়াণে দেশের সংগীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন অঙ্গনের সংস্কৃতিকর্মীরা সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন। তার মৃত্যুসংবাদের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে শোক জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা।

সেই পোস্টে কনকচাঁপা লিখেছেন—বিটিভিতে আজানের জবাবে তার কণ্ঠ শুনতাম আর ভাবতাম—সুমধুর কণ্ঠ। এ কণ্ঠ যেন বেহেশত থেকে আসছে। তিনি বলেন, তাদের দুই কন্যা সামিরা ও শারমিনী দুজনের সঙ্গেই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক আমার। কদিন আগে তাদের মা বিদুষী আসমা আব্বাসীজিও চলে গেলেন। আমি তাদের পুরো শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাই। আল্লাহ যেন তাদের এ শোক সইবার শক্তি দেন।

এ কণ্ঠশিল্পী বলেন, আমাদের মুস্তাফা জামান আব্বাসী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত আপাদমস্তক একজন শিল্পী, যিনি কিনা কুরআন মজিদের বাংলা অনুবাদসহ নবীজির (স.) জীবনী ও আরও অনেক জ্ঞানগর্ভ বই লিখেছেন। বাংলাদেশের গানের ইতিহাস লিখতেন।

কনকচাঁপা বলেন, আমাদের দেশের অমূল্য রতন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য এ ব্যক্তিত্ব আজ (১০ মে) সকালে ইন্তেকাল করেছেন। তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৮৮ বছর। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গন, সাহিত্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। সংগীতচর্চার পাশাপাশি তিনি গবেষক ও লেখক হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেছিলেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের স্থায়ী বাসিন্দা করে নেওয়ার অনুগ্রহ করুন।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী উপমহাদেশের খ্যাতিমান সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তার বাবা আব্বাসউদ্দীন আহমদ ছিলেন পল্লিগীতির সম্রাট। বাংলার পল্লিসংগীতকে মুস্তাফা জামান আব্বাসীই প্রথম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার চাচা আবদুল করিম ছিলেন পল্লিগীতি ও ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালির জনপ্রিয় শিল্পী। তার বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি গত ১০ বছর হলো মারা গেছেন। তার ছোট বোন ফেরদৌসী রহমান দেশের অন্যতম খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী। তার স্ত্রী আসমা আব্বাসী একজন শিক্ষক ও লেখিকা ছিলেন। তিনি গত বছর মারা গেছেন।

উল্লেখ্য, মুস্তাফা জামান আব্বাসী ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের কোচবিহারের বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতায় তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ, এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। এ শিল্পী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

তার লেখা উল্লেখযোগ্য কিছু বইয়ের মধ্যে হচ্ছে—‘রুমির অলৌকিক বাগান’, উপন্যাস ‘হরিণাক্ষি’, স্মৃতিকথা ‘স্বপ্নরা থাকে স্বপ্নের ওধারে’, ‘লোকসংগীতের ইতিহাস’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’। দেশীয় সংগীত ও সংস্কৃতিতে অনন্য অবদান রাখার জন্য একুশে পদকসহ দেশে-বিদেশে তিনি অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন।