বিনোদন ডেস্ক- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে বইছে নির্বাচনি উত্তাপ। সেখানে লাঠিতে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে প্রবীণ একজনকে। চেনা মুখ, অভিনেতা জামিলুর রহমান শাখা।
কাছে যেতেই জানালেন, বয়স ৮০, বার্ধ্যক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এখনও অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে সিনেমায় নয় নাটকে। সেটাও কম। কারণ, থাকেন দোহার নবাবগঞ্জ এলাকার একটি গ্রামে। গাড়িতে চড়ে দূর যাত্রায় শুটিংয়ে যেতে অনেক কষ্ট হয়।
এফডিসিতে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় এ অভিনেতা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ সিনেমায় অভিনয় করলেও এখন তাঁর সংসার চালাতে হয় ১১ হাজার টাকায়।
পর্দায় তিনি বাবা, জজ সাহেব, কুলি, চাকর, শিক্ষক থেকে এমন কোনো ‘চরিত্র’ নেই যা করেননি! ৪২ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে ছয় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই শাখা। তবে অভিনয় জীবনে তার একটি আফসোস তাড়া করে বেড়ায়। কখনও ‘সেন্ট্রাল ক্যারেক্টার’-এ অভিনয়ের সুযোগ পাননি প্রবীণ এই অভিনেতা।
এই অভিনেতা জানান, তিনি দোহার নবাবগঞ্জ এলাকার একটি গ্রামে থাকেন। সেখান থেকে একটি চেক পেতে ঢাকায় এসেছিলেন। সেই সঙ্গে ভোটের আমেজ চলছে এফডিসিতে, সেটা জেনেই ঘুরে দেখতে এসেছিলেন। বলছিলেন, জ্যাম ঠেলে এফডিসি আসতে বেগ পোহাতে হয়ে তাকে।
ঢাকায় থাকেন না কেন জিজ্ঞেস করতেই জামিলুর রহমান শাখা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, আমাদের যখন ক্যারিয়ার শুরু তখনকার অনেক পরিচালক আর বেঁচে নেই। অনেক শিল্পীরাও মারা গেছেন। যারা আছেন তারা সেভাবে কাজ করেন না। তবে অধিকাংশই ভালো আছেন। আমি গত ১৭ বছর যাবত গ্রামে থাকি। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকার সামর্থ্য নেই। এতো বাসা ভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে থাকা সম্ভব না। আমার দুই ছেলে মেয়ে। মেয়ে ঢাকায় পড়ে। ছেলে বাইরে চাকরী করে। সপ্তাহে একদিন বাড়িতে আসে।
এই বয়সে ঢাকায় বাস করা আমার জন্য জরুরী না। এখন এতোটা সিনেমায় কাজ হয় না। টুকটাক নাটকে কাজ করি। যেদিন শুটিং থাকে আসি। জীবনে সাড়ে ছয়শো’র মতো সিনেমায় অভিনয় করেও সেন্ট্রাল চরিত্র পাইনি। এটাকে আমি মনে করি আমার অক্ষমতা। তবে আমি নায়ক হওয়ার কম চেষ্টা করিনি। কিন্তু বলা হতো, শাবানার পাশে স্টার কাস্ট লাগবে। এভাবেই আমাকে ফিরিয়ে দেয়া হতো। এটা আমি আমার নিজের ব্যর্থতাই বলবো। আমি যদি যোগ্য হতাম তাহলে একবার হলেও সুযোগ পেতাম।
২০১৯ সাল নাগাদ চরমভাবে অর্থকষ্টে ভুগছিলেন জামিলুর রহমান শাখা। তখন শিল্পী সমিতি থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয় বলে জানান এই অভিনেতা। এরপর থেকে সেই টাকার উপর নির্ভরশীল তার পরিবার।
জামিলুর রহমান শাখা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়ীপত্র অনুদান পাই। সেখান থেকে প্রতিমাসে আট হাজার টাকা করে পাই। আমার মেয়ে প্রতিমাসে দেয় তিন হাজার টাকা। এই এগারো হাজার টাকায় সংসার চালাতে হয়। এভাবেই সংসার চলে। অভিনয় তো তেমন করা হয় না। গাড়িতে চড়ে দূর যাত্রায় শুটিংয়ে যেতে সবচেয়ে কষ্ট হয়। তাই দূরে শুটিং হলে করি না।
তবে আঞ্জুমান, মাঝির ছেলে ব্যারিস্টার, হৃদয়ের কথা, খায়রুন সুন্দরী, সত্যের মৃত্যু নেই, প্রেম পিয়াসী, আমার প্রাণের স্বামীর মতো আলোচিত সব সিনেমায় ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পাওয়া জৈষ্ঠ্য এই অভিনেতা জানান, তার জীবনে আর তেমন কিছু চাওয়ার নেই। বলেন, আমাকে দিয়ে সব ধরনের চরিত্র করানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং নায়ক বাদে কোনো চরিত্র বাদ আছে কিনা জানা নেই। তবে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ‘রাজধানী’ সিনেমার কথা। অনেকটা ভিলেন টাইপের চরিত্র করেছিলাম। এছাড়া একবার জসিম ভাইয়ের কথায় ফাইটিংয়ের শুটিংয়ে সত্যি সত্যি তার বুকে ঘুষি মেরেছিলাম। এই জিনিসটা বেশি বেশি মনে পড়ে।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.