৭২ ঘণ্টায় ৬ মুসলিম দেশে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজায় ২৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে ভয়াবহ আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।  হামাস উৎখাত ও জিম্মি মুক্তির নামে প্রতিদিনই অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার সেনারা। প্রায়ই ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার শিকার হচ্ছে লেবানন, সিরিয়া আর ইয়েমেনও। এক কথায় গত দুই বছরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে ইসরায়েল। পুরো বিশ্ব তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেও নেতানিয়াহু প্রশাসনকে আগ্রাসনমূলক এসব কর্মকাণ্ডে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

পরম বন্ধুর এমন সমর্থন পেয়ে যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দখলদার রাষ্ট্রটি। সবশেষ তাদের হামলার শিকার হয়েছে কাতার ও তিউনিসিয়াও। মাত্র ৭২ ঘণ্টায় কাতার, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে গাজায় দখলদার বাহিনীর সিরিজ হামলায় প্রাণ গেছে অন্তত ১৫০ জনের, আহত হয়েছেন আরও শত শত মানুষ।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতাদের একটি বৈঠকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই বৈঠকটি গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য দেওয়া মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার জন্য আহ্বান করা হয়েছিল।

হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ছয়জন— যাদের মধ্যে ছিলেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খালিল আল-হায়্যার ছেলে, তার কার্যালয়ের পরিচালক, তিনজন দেহরক্ষী এবং একজন কাতারি নিরাপত্তাকর্মী। তবে, হামাসের শীর্ষ নেতারা বেঁচে গেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে সোমবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ১৫০ জন নিহত ও ৫৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। শুধু সোমবারেই ৬৭ জন নিহত হন এবং ৩২০ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

এদের মধ্যে ১৪ জন নিহত হন ত্রাণ সংগ্রহের সময় এবং শিশুসহ আরও ছয়জন মারা যান অনাহারে। মঙ্গলবার নিহত হন আরও ৮৩ জন, আহত হন ২২৩ জন। 

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৪ হাজার ৬৫৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪০৪ জন ক্ষুধা-জনিত কারণে মারা গেছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের মৃত বলে মনে করা হচ্ছে।

সোমবার দুপুরে লেবাননের বেকা ও হারমেল জেলায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন অন্তত পাঁচজন। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহর অস্ত্রগুদাম ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, তবে স্বাধীনভাবে এ তথ্য যাচাই হয়নি।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই এখন লেবাননে হামলা চালাচ্ছে। মঙ্গলবার বৈরুতের দক্ষিণে বারজা গ্রামে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় আহত হন হিজবুল্লাহর একজন সদস্য।

সোমবার রাতে সিরিয়ার হোমসের একটি বিমানঘাঁটি ও লাতাকিয়ার কাছে একটি সামরিক ব্যারাকে হামলা চালায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ হামলাকে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে শত শত হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুধু চলতি বছরেই প্রায় ১০০টি হামলায় অন্তত ৬১ জন নিহত হয়েছেন।

সোমবার রাতে তিউনিসিয়ার সিদি বু সাঈদ বন্দরে ‘ফ্যামিলি বোট’ নামের এক জাহাজে ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল। ২৩ মিটার দৈর্ঘ্যের এ জাহাজে ছয়জন যাত্রী ছিলেন। আগুন লাগলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

পরের রাতে তিউনিসিয়া উপকূলে যুক্তরাজ্যের পতাকাবাহী ‘আলমা’ জাহাজেও একইরকম হামলা হয়। 

সবশেষ বুধবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হুথি অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় সানা বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলতি মাসের শুরুতেও একই বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল।

এর আগে, গত ২৮ আগস্ট ইসরায়েলি হামলায় হুথি সরকারের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আল-রাহাউইসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন।