পায়ে হেঁটেই বাংলাদেশ ভ্রমণ করছে এক নেপালি যুবক। তার নাম ইহ। হেঁটে চার দেশ ভ্রমণ করেছে ২৭ বছর বয়সী নেপালি এ যুবক। তার নিজ দেশ নেপাল থেকে শ্রীলঙ্কা, ভারত হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। নেপালি এই তরুণ বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুঁলিয়া পর্যন্ত হাঁটবেন। ইতোমধ্যে তিনি জয়পুরহাট জেলা ভ্রমণ করেছেন।
ইহ জানিয়েছেন, ভ্রমণ ভালো লাগার কারণে ১৪ বছর বয়সে তিনি স্কুল ছাড়েন। ছেড়েছেন পরিবারও। এখন ভ্রমণই তার জীবন। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত হয়ে বাংলাদেশ এই চার দেশ ভ্রমণের জন্য ২৩৬ দিন আগে হেঁটে কাঠমান্ডু থেকে বের হন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে হেঁটে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার পথে রওনা দেন। এর কয়েকদিন আগে তিনি বাংলাদেশে আসেন। চলার পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর উঁচু-নিচু পথ পাড়ি দিয়ে ৭২৩ কিলোমিটার হেঁটে শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় পৌঁছান। এরপর সেখান থেকে দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার দিকে রওনা দেন তিনি।
ইহ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর থাপাথালি এলাকার বাসিন্দা। নেপালি এই যুবকের ভ্রমণসঙ্গী হয়েছেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও লেখক হোমায়েদ ইসহাক ওরফে মুন। তিনি ওই নেপালি যুবকের বাংলাদেশি বন্ধু।
হোমায়েদ ইসহাক বলেন, আমি এভারেস্ট বেজক্যাম্পে যাওয়ার পরে কাঠমান্ডুতে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। ইহ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে হেঁটে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত পাড়ি দেওয়ার পর বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে চান। এরপর তিনি ঢাকায় আসার পর আমি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি এবং এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে আছি। আমরা পঞ্চগড়ের শেষ পর্যন্ত যাব। আমি সাইকেল চালিয়েও ভ্রমণ করি।
তিনি বলেন, ইহ বাংলাদেশে এসেছেন, এতে অনেক ভালো লাগছে। কেননা একটা অন্য দেশের মানুষ আমাদের দেশে এসেছে, এই দেশের মানুষের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারছি। সেটার জন্য অনেক ভালো লাগছে। তার থেকেও বেশি ভালো লাগছে যে, এই যে একটা অনেক লম্বা সময় হাঁটা, সে এটা বোধ করতে পারছে। ইই আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে ভিন্নতা খুঁজে পাচ্ছে, আমিও তার সঙ্গে ঘুরে খুবই কাছে থেকে এটা দেখতে পাচ্ছি।
নেপালি যুবক ইহ বলেন, এই দেশে সাউথ অঞ্চলের মানুষের চেয়ে নর্থ অঞ্চলের মানুষ খুবই ভালো। তারা অতিথি পরায়ণ। এখানকার জীবনযাপন ও সংস্কৃতি দারুণ। পথে পথে সবুজ ফসলের মাঠ দারুণ লেগেছে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। হাটবাজারগুলোতে অনেকেই আমাকে দেখে আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে আসছেন। চা-বিস্কুট খাওয়ার আমন্ত্রণও জানাচ্ছেন। সবাই হাসিমুখে কথা বলছেন।
তিনি বলেন, আমি একদিনে সর্বোচ্চ ৪৩ কিলিমিটার রাস্তা হেঁটেছি। আজ (শুক্রবার) ৩৮ কিলোমিটার রাস্তা হাঁটা হবে। শ্রীলঙ্কা, ভারতের চেয়ে এখানে বেশ ভালো লাগছে। কেননা এখানে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে একজন বন্ধু পেয়েছি। এই বন্ধু আমার কথা বলার ক্ষেত্রে সহজ করে দিচ্ছে।
ইহ বলেন, টেকনাফ থেকে হেঁটে রওনা দিলেও চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে হেঁটে পারাপার নিষিদ্ধ ছিল। তাই সেখানে নৌকায় পার হতে হয়েছে। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু সেতুতে হেঁটে চলাচলের সুযোগ না থাকায় টাঙ্গাইলের আলীপুরঘাট থেকে নৌকায় যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে সিরাজগঞ্জে পৌঁছাই। সেখান থেকে হেঁটে শুক্রবার বিকেলে পাঁচবিবিতে পৌঁছাই। এরপর রাতে হিলিতে রাত্রিযাপন গিয়ে শেষে শনিবার সকালে হেঁটে আবারও রওনা দেব। এভাবে হেঁটে হেঁটে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধায় যাব। এরপর সেখান থেকে আবারও হেঁটে নিজ দেশ নেপালে ফিরব।