ডিসেম্বর মানেই বছরের বিশেষ একটা মাস। একে তো বছর শেষ, তার উপরে আবার রয়েছে ক্রিসমাস। তাছাড়াও এই ডিসেম্বরই এমন এক মাস, যে সময় মহাকাশেও একাধিক ঘটনা ঘটে থাকে।
তেমনই এক ঘটনা হলো উল্কার বৃষ্টি, যা এই ডিসেম্বরেই সবথেকে বেশি লক্ষ্য করা যায়। মহাকাশের পরিভাষায় এর নাম জেমিনিড (Geminid)।
বছরের সেরা উল্কাবৃষ্টি বা জেমিনিড প্রতি বছরই ডিসেম্বর মাসে আকাশকে গ্রাস করে থাকে। খুব অল্প সময়ের জন্য সক্রিয় থাকে এটি, যা ১৪ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে। উল্কাবৃষ্টির এহেন দর্শনীয় আলো দেখতে একজনকে মিথুন তারামণ্ডলের (Gemini) দিকে তাকাতে হবে। আর সেই কারণেই এই উল্কাবৃষ্টির নাম জেমিনিড। জানা গিয়েছে, চলতি বছরে ১৪-১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতি ঘণ্টায় ১২০টি করে উল্কাপিণ্ড আকাশ থেকে পড়বে।
তবে এবার জেমিনিডের এই অভূতপূর্ব দৃশ্যে হস্তক্ষেপ করবে চাঁদ। মাঝরাতে বা তার আগে (আপনি কোথায় থাকছেন, তার উপরে নির্ভর করবে) চাঁদের আলো এই অভূতপূর্ব দৃশ্যকে মুছে ফেলতে পারে। উল্কাবৃষ্টির জন্য চাঁদের এমনতর প্রভাব প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে জেমিনিডদেরও চাঁদের আলোর সঙ্গে লড়াই করার যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। তাই, উল্কার ঝরনা আপনি যে পৃথিবীতে বসে দেখতে পারবেন না, এমনটা নয়। তারও আগে কয়েকটা বিষয় আপনার জেনে রাখা উচিত। জেমিনিড আসে কোথা থেকে, ইতিহাস কী বলছে, আপনিই বা কীভাবে দেখতে পাবেন?
জেমিনিড কী? ইতিহাস কী বলছে-
জেমিনিড হলো পাথুরে ধূমকেতুর টুকরো, যা আমাদের সৌরজগতের ধ্বংসাবশেষে পরিপূর্ণ। এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ধূমকেতু এবং পৃথিবীর কাছাকাছি একাধিক গ্রহাণু রয়েছে, যারা সূর্যের চারপাশের কক্ষপথ ধরে নিজেরাই পৃথিবীকে অতিক্রম করে। ধূমকেতু এবং গ্রহাণু উভয়ই আমাদের নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে এবং মহাকাশে ধুলো ও ধ্বংসাবশেষ তৈরি করে। Geminids 3200 Phaethon নামের একটি গ্রহাণু থেকে উদ্ভূত হয়েছে এই জেমিনিড। এই ফেথনের শিলাগুলো প্রসারিত হয় এবং তাপের সংস্পর্শে আসে যা ভেঙে গিয়ে ধ্বংসাবশেষ তৈরি করে। হাজার হাজার বছর ধরে এই ধ্বংসাবশেষ ফেথনের কক্ষপথের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, একটি বিশাল ‘টিউব’ গঠন করেছে।
সেরা দৃশ্য কখন দেখা হবে?
প্রতি বছর ডিসেম্বরে আমরা এই ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে যাই, যখন পৃথিবী সূর্যের কাছাকাছি চলে আসে। আমাদের বায়ুমণ্ডলে এই দহন (যদিও আগুন নেই) জেমিনিড উল্কাবৃষ্টির কারণ হয়।
তাহলে ২০২২ সালে জেমিনিড কোথায় আছে তার সন্ধান করা উচিত।