বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে বিরিয়ানি খাবারটি। কোনো জাকজমক অনুষ্ঠানে এই খাবারটির অনুপস্থিতি অনেকে কল্পনাই করতে পারে না। কিন্তু কখনও কি খেয়াল করেছেন, আপনার প্রিয় এই খাবারটির হাঁড়ি কেন প্রায় সব দোকানেই লাল রঙের কাপড়ে মোড়ানো থাকে।
বিরিয়ানি মূলত মোগলাই খাবার। মজাদার এই খাবারটির প্রথম প্রচলন হয় দিল্লি এবং লখনৌতে। ১৮৫৬ সালে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ কলকাতায় আসার পর কলকাতাতেও এই খাবারটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।এরপর ধীরে ধীরে এই খাবার ভারত পেরিয়ে বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বিরিয়ানির নানা ধরনেই খুঁজে পাওয়া যায় মজাদার স্বাদ।
চিকেন বিরিয়ানি, মটন বিরিয়ানি কিংবা ডিম বিরিয়ানি যেকোনো ধরনেই কিন্তু আপনি বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল কাপড় মোড়ানো দেখতে পাবেন। কেন এমন করা হয় তা জানলে অবশ্য একটু অবাকই হবেন।
পৃথিবীর সব দেশেই রঙের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ ও ব্যবহার রয়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের চিন্তাভাবনায় রং বেশ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে লাল রং।ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাধারণত লাল রঙের ব্যবহার একেক দেশে একেক ধরনের। তবে বেশিরভাগ দেশেই লাল রংকে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। এ কারণে দেখবেন বিদেশি অতিথিদের লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়।
আবার কোনো দেশে আক্রমণ ও বিপদ অর্থে ব্যবহার হয় এই লাল রং। এছাড়া ট্রেনের রাস্তার সিগনালে লাল রং ব্যবহার করা হয়। ফুটবল খেলার মাঠেও রেফারিরা প্রথমে সতর্কতা হিসেবে হলুদের পর বিপদজনক আচরণের জন্য লাল কার্ডের ব্যবহার করেন।
এসব নেতিবাচক দিকও লাল রংয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। তবে সাধারণত উষ্ণতা, আনন্দ উৎসব ও ভালোবাসা, আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে হৃদয়ের লাল রং ব্যবহার করা হয়।তবে বিরিয়ানির হাঁড়িতে কেন লাল রঙের কাপড় ব্যবহার করা হয় তা জানতে গেলে আমাদের ইতিহাসে পিছিয়ে যেতে হবে। ইতহাস থেকে জানা যায়, মুঘল সম্রাট হুমায়ুন যখন রাজ্য হারিয়ে ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন তখন তাকে পারস্য সম্রাট গালিচার উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে ছিলেন।
খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে তারা রুপালি পাত্রর খাবার গুলোতে লাল কাপড় আর চিনামাটির খাবারগুলোতে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে নিয়ে আসতো। এই রীতি মুঘল সম্রাটকে খুব মুগ্ধ করে। যার কারণে পরবর্তীতে মুঘল সাম্রাজেও এই রীতি চালু করা হয়।
খাবার পরিবেশনের এই প্রথা ও রঙের ব্যবহার লখনৌ শহরের নবাবরাও অনুসরণ করতেন। মূলত রাজকীয় ও দামি খাবার বোঝাতে বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল রংয়ের কাপড় মোড়ানো থাকে।
সমাজ জীবনে খাবারের এই আভিজাত্য, মোঘলীয় রাজকীয় ভাব ও উষ্ণতা প্রকাশের জন্যই বিরিয়ানির হাঁড়ি লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। যুগ যুগ ধরে এই রীতি আজও প্রচলিত আছে যাতে মানুষ বুঝতে পারে বিরিয়ানি কোনো সাধারণ খাবার নয় বরং এটি নবাবী ঘরানার খাবার।