২২ বছরের যুবক নাহিদ। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। নেই কোনো কারিগরি জ্ঞান। তবুও নিজের মেধা খাটিয়ে মাত্র এক মাসের পরিশ্রমে একটি বাইসাইকেলকে মোটরসাইকেলে রূপান্তর করেছেন। যা ১ লিটার তেলে ৮০ কিলোমিটার চলতে পারে। মোটরসাইকেলটি দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছে এলাকার লোকজন।
নাহিদ শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের সন্নাসীরচর গ্রামের মো. আব্দুল মালেক ভান্ডারি ও নাজমুন্নাহার দম্পতির ছোট ছেলে। তিনি এক মাস পরিশ্রম ও মেধা খাঁটিয়ে পুরোনো বাইসাইকেলকে মাত্র ১২ হাজার টাকা খরচ করে বানিয়ে ফেলেছেন মোটরসাইকেল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাহিদ দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা পেশায় একজন বাউল শিল্পী, মা গৃহিণী। ছোট থেকেই নাহিদ খুব চঞ্চল প্রকৃতির। সে এক সময় জুতা তৈরির কারখানায় কাজ করতো। পরে তার মা-বাবা বাড়ির পাশে একটি ছোট গ্যারেজ দিয়ে দেন। সেখানেই নাহিদ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও বাইসাইকেল মেরামত করেন। তবে নাহিদ নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে তেল সাশ্রয়ী মোটরসাইকেল বানিয়ে ফেলেছেন। নাহিদের মোটরসাইকেল দেখে বিস্মিত গ্রামবাসী। তার মোটরসাইকেলটি দেখতে গ্যারেজে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে মানুষ।
নাহিদের এমন কর্মকাণ্ড দেখে খোদ পরিবারের সদস্যরাই অবাক। তার ভাই রুবেল বলেন, ‘সাইকেলের টেহা (টাকা) দিয়ে মোটরসাইকেল পাওয়া যায়, এইডা আমাগো বিশ্বাস অইতাছে না।’
এ বিষয়ে নাহিদ বলেন, ‘ছোট থেকেই মোটরসাইকেলে প্রতি আমার আলাদা আকর্ষণ কাজ করতো। তখন থেকেই ভাবতাম বড় হয়ে একটি মোটরসাইকেল বানামু। কাজের ফাঁকে ফাঁকে মোটরসাইকেল বানাইতাম। মোটরসাইকেলটিতে আমার চলাচলে ব্যবহৃত একটি পুরোনো বাইসাইকেল, পুরাতন যন্ত্রাংশ এবং ফেলে দেওয়া মোটরবাইকের জিনিসপত্র ব্যবহার করেছি। মোটরসাইকেলটি প্রতি লিটারে তেল কমপক্ষে ৮০ কিলোমিটার যেতে পারে।’
এ বিষয়ে নাহিদের বাবা মো. আব্দুল মালেক ভান্ডারি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। কামকাজ কইরা কোনোভাবে পেটের ভাতই জোগাড় করাবার পাই। এডা (একটা) পুরোনো ভাঙ্গা বাইসাইকেল, পুরাতন যন্ত্রাংশ এবং ফেলে দেওয়া মোটরবাইকের জিনিসপত্র দিয়ে মোটরসাইকেল বানাইছে। আমার পুলাডারে সরকার থেকে কিছু দিলে তা দিয়ে আরও ভালো কিছু করতে পারত।
স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ও যখন এ বাইকটা বাইনাইতো, তখন আমরা বিশ্বাসই করি নাই সে এ রকম মোটরসাইেকল বানাইতে পারবে। আসলে ছেলেটার মেধা আছে। তাকে সহায়তা করলে সে আরও ভালো কিছু করতে পারবে।’স্কুলছাত্রী স্মৃতি জানায়, ‘আমরাতো অবাক হয়ে গেছি। এ রকম অল্পশিক্ষিত একটা ছেলে সুন্দর একটা মোটরসাইকেল বানিয়ে আমাগো তাক লাগিয়ে দিয়েছে।’
কামারেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আমার ইউনিয়নের সন্নাসীরচর গ্রামের বাসিন্দা নাহিদ। ছেলেটি ৮ম শ্রেণি পাস। পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে ১২ হাজার টাকা খরচ করে সাইকেলের মধ্যে যন্ত্রপাতি বসিয়ে মোটরসাইকেল বানিয়েছে। সেই মোটরসাইকেল ১ লিটার তেল দিয়ে ৮০ কিলোমিটার যায়। তার প্রতিভা দেখে আমরা ইউনিয়নবাসী অবাক। সে যদি এই কাজ চালিয়ে যায়, আমি ইউনিয়ন থেকে ও সরকারিভাবে সাহায্য নিয়ে দিব।