আমরা সবাই জানি যে যে কোন গাছকে কাটিং করলে এটি দ্রুত বাড়ে। আজকের এই ভিডিওটিতে মূলত কাটিং নিয়েই দেখানো হয়েছে। তাই আমরা কাটিং সম্পর্কে জানব। আপনার যদি কাটিং সম্পর্কে কোন আইডিয়া না থাকে তাহলে এই ভিডিওটি আপনার জন্য। কাটিং বলতে কি বুঝায়ঃ কাটিং হল গাছের বংশবিস্তারের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি।
গাছের বিভিন্ন অংগ, যেমন – কান্ড, শিকড়, পাতা, পত্রকুড়ি প্রভৃতি মাতৃগাছ থেকে আলাদা করে রাসায়নিক, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বা পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে শিকড় গজানোর মাধ্যমে মাতৃগাছের অনুরুপ নতুন গাছ উৎপাদনকে কাটিং বলে। কাটিং এর সুবিধাঃ ১. অংগজ বংশবিস্তার পদ্ধতি সমূহের মধ্যে এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে সহজে ও কম খরচে অধিক চারা উৎপাদন করা যায়। ২. এ পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় অনেক চারা উৎপাদন করা যায়। ৩. এতে তেমন খুব একটা
কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। ৪.একটি মাত্র গাছ থেকে অসংখ্য গাছ জন্মানো সম্ভব হয়। ৫.বসত বাড়ীতে হেজ বা বেড়া নির্মাণে ও ফল গাছের বংশবিস্তারে এটি একটি বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় পদ্ধতি। কাটিং এর অসুবিধাঃ ১. উপযুক্ত পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক সময় কর্তিত অংশের মূল গজায় না। ২. অনেক সময় কাটিং মাটি বাহিত বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ৩. অনেক সময় শিকড় গজানোর পর মাটির প্রতিকূল অবস্থার কারণে শিকড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৪. কাটিং পদ্ধতিতে যে গাছ জন্মায় তা খুব সহজেই ঝড় বাতাসে উপড়ে যেতে পারে। কারণ এর কোন প্রধান মূল নেই। ৫. সব ধরনের গাছে কাটিং সফল হয় না। কোন কোন গাছে এর সফলতার হার এত কম যে সেক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অনুমোদন করা যায় না। যেমন- বীজবিহীন এবং এলাচি লেবুতে কাটিং এর সফলতার হার অনেক বেশি অথচ কাগজি লেবুতে কাটিং সফলতার হার খুব কম।
কাটিং এর প্রকারভেদ : শিকড় কাটিংঃ পরিণত গাছের শিকড় বা শিকড়াংশ মাতৃগাছ থেকে আলাদা করে নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় চারা উৎপাদন পদ্ধতিকে শিকড় কাটিং বলে। এই পদ্ধতিতে ১৫-২০ সেঃ মিঃ লম্বা এবং পেন্সিল বা আঙ্গুলের মতন মোটা শিকড়ের অংশ তির্যকভাবে কেটে মাটিতে পুতে রাখতে হয়। এ কলম করার ক্ষেত্রে মাটিতে পরিমিত আদ্রতা নিশ্চিত করতে হবে। কিছুদিন পর কাটিং থেকে শিকড়সহ নতুন শাখা বের হয় এবং নতুন গাছের জন্ম দিবে।
এই পদ্ধতিতে পেয়ারা, বেল, ডালিম, লেবু, বাগান বিলাস, এলামন্ডা ইত্যাদি ফল ও ফুলের চারা উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতিতে গাছের বংশবিস্তার আমাদের দেশে বর্ষাকালে করা হয়। গাছ নতুন ভাবে যখন ডালপালা ছাড়া শুরু করে তার পূর্বেই এই শিকড় সংগ্রহ করতে হয়। কারণ এই সময় শিকড়ে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য মজুদ থাকে। এতে কাটিং এ সফলতার হার বেড়ে যায়। শাখা কাটিংঃ গাছের ডাল থেকে যে কাটিং করা হয় তাকে ডাল কাটিং বলা হয়। ভাল কলম পাওয়ার জন্য ডাল কর্তনকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন – শক্ত ডাল কাটিং, আধাশক্ত ডাল কাটিং, কচি ডাল কাটিং এবং কোমল ডাল কাটিং ।
পাতা কাটিংঃ কিছু কিছু গাছ আছে যেমনঃ পাথর কুচি, মিষ্টি আলু, লেবু, ফনিমনসা, ইত্যাদির পাতা কাটিং হিসাবে ব্যবহার করলে সহজে চারা উৎপাদন করা যায়। এ পদ্ধতিতে সম্পুর্ণ পাতা বা পাতার বিভিন্ন অংশ, যেমনঃ পত্রফলক, বোটাসহ পাতা প্রভৃতি মাতৃগাছ হতে আলাদা করে নতুন চারা উৎপাদনকে পাতা কাটিং কলম বলে। পাতার গোড়া বা অন্যান্য অংশ থেকে শিকড় ও পাতা বা কান্ড জন্মে নতুন চারা উৎপন্ন হয়। পত্র কলমের জন্য অধিক আদ্রতার দরকার হয়।
পত্রকুঁড়ি কাটিংঃ কিছু কিছু গাছ আছে যাদের পত্রকুঁড়ি কাটিং হিসাবে ব্যবহার করে সহজে চারা উৎপাদন করা যায়। এ পদ্ধতিতে পাতা, পাতার বোটা, ছোট একটুকরা কান্ড ও পত্রাক্ষে অবস্থিত একটি সুপ্ত কুঁড়ির সমন্বয়ে গঠিত হয় পত্রকুঁড়ি কলম। যেমন – চা, এলাচি লেবু ইত্যাদি। যেসব গাছের পাতা থেকে শিকড় বাহির হয় কিন্তু কান্ড বাহির হয় না এমন গাছের জন্য পত্রকুড়ির কাটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শীতের শেষ দিকে সাধারণতঃ পত্রকুঁড়ি কলম করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে এক মৌসুমেই প্রতিটি কুঁড়ি হতে একটি নতুন চারা উৎপাদন করা যায়। কাটিং এর সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বুঝতে হলে অবশ্যই আপনাকে ভিডিওটি দেখতে হবে ভিডিওটি দেখলে আপনি কাটিং করার পদ্ধতি নিজ চোখে দেখতে পারবেন এবং আইডিয়া দিতে পারবেন আজ এই পর্যন্তই থাক। আপনি যদি ভিডিওটি দেখতে চান তাহলে নিচের লিঙ্কে গিয়ে দেখে আসতে পারেন।