টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের শালিয়াবহ দক্ষিণপাড়া গ্রামের ইদরিছ আলী। এক সময় বড়শি দিয়ে মাছধরা ছিল তার নেশা ও পেশা। গ্রামের মানুষ তাকে ডাকতো বড়শিওয়ালা ইদরিছ বলে। সখের বসে সাপ ধরতে গিয়ে এখন হয়েছেন সাপওয়ালা ইদরিছ। অনেকে তাকে সাপুড়ে বলেও ডাকে। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গিয়ে বিষধর সাপ থেকে শুরু করে নানা জাতের সাপ ধরা এখন তার পেশা হয়ে গেছে।
সাপ ধরে দিয়ে মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সম্মানির টাকা দিয়ে এখন তার সংসার চলে। গত ২৫ জুলাই সোমবার বিকেলে উপজেলার শালিয়াবহ দক্ষিণপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের গ্রাম থেকে অনেকেই সাপ দেখার জন্য তার বাড়িতে এসেছেন। কথা হয় ইদরিছ আলীর সাথে। তিনি শুনান বড়শিওয়ালা থেকে তার সাপওয়ালা হওয়ার কাহিনী।
ইদরিছ আলী জানান, ৯ শতাংশ বাড়ি-ভিটা ছাড়া তার কোনো জমি নেই। তার সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। দুই ছেলে মাসুদ ও মাহফিজ দু’জনই পেশায় ড্রাইভার। বিয়ে করেছেন দু’জনেই। একমাত্র মেয়ে তাসলিমারও বিয়ে হয়েছে।
এক সময় খালে-বিলে নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরাই ছিল ইদরিছ আলীর একমাত্র পেশা। তখন বাজারে মাছ বিক্রির আয় দিয়ে সংসার চলতো। পাহাড়িয়া সমতলভূমির মাঝামাঝি হওয়ায় তার গ্রামে সাপের উৎপাতটা একটু বেশি। তিন বছর আগে নিজ গ্রামের সরকারি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান মুসার বাড়িতে শখের বসে সাপ ধরতে গিয়েই ইদরিছ আলী সাপ ধরার নেশায় পড়ে যান। তাই ৬৪ বৎসর বয়সে এসে জড়িয়ে পড়েন সাপ ধরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায়। বাদ পড়ে যায় বড়শি দিয়ে মাছ ধরার পেশা।
এখন সাপ ধরেই তার সংসার চলে। তিনি জানান, সাপ ধরার কোনো তন্ত্র মন্ত্র জানেন না তিনি। কোনো সাপুড়ের কাছে গিয়ে সাপ ধরার প্রশিক্ষণও নেননি। মনের সাহস দিয়েই তিনি সাপ ধরেন। এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। কারো বাড়িতে সাপ বাসা বাঁধলে বা বের হলে মোবাইলে ফোন দিলেই তিনি সাপ ধরতে বাসা-বাড়িতে গিয়ে হাজির হন।
নিজ উপজেলা ও জেলার বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও সাপ ধরার ডাক পড়ে তার। তবে নিজ জেলার বাইরে কম যান। গত ১৫ দিনে বিভিন্ন স্থান থেকে গোখরা, দাঁড়াশ, দুধরাজ, পঙ্খীরাজসহ বিভিন্ন জাতের ১০০টির বেশী সাপ ধরেছেন বলে জানান এই সাপওয়ালা।
ইদরিছ আলীর ছেলে মাসুদ জানান, সাপ ধরতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় দংশনের শিকার হয়েছেন। তবে তিনি কোনো ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি। একদিন সাপ ধরতে গিয়ে ১১ বার দংশনের শিকার হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি হাসপাতালে নিতে মানা করলেও তাকে আমরা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শরীরে কোনো বিষক্রিয়া না থাকায় কোনো ভ্যাকসিন না দিয়েই বাড়িতে নিয়ে আসি।
ইদরিছ জানান, তিনি এক ধরনের ঔষধি গাছের ফাকি (গুঁড়া) নিয়মিত সেবন করে থাকেন যার কারণে সাপে দংশন করলে কোনো বিষক্রিয়া হয় না। সেবনকৃত ঔষধি গাছের ফাকি তিনি ভারতের কুচবিহার থেকে লোক মারফত সংগ্রহ করে থাকেন।
সাপ ধরার পারিশ্রমিক হিসাবে কেউ ২০ টাকা কেউ ১০০ থেকে ২০০ টাকা, আবার কেউ পাঁচশত টাকা– যার যা মন চায় দিয়ে থাকে। এ নিয়ে তিনি কোনো দর-দাম করেন না। সাপ ধরার পারিশ্রমিক সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন বলে জানান তিনি।সাপ ধরার মৌসুম সব সময় থাকে না। তাই সাপ ধরার আয় দিয়ে তার সংসার চালাতে কষ্ট হয়। মানুষের অনুরোধে এ পেশা ছাড়তেও পারছেন না।
শালিয়াবহ গ্রামের আজিজুল ইসলাম ও ঠান্ডু মিয়া জানান, তার বাড়িতে ৪/৫টি বিষধর সাপ সবসময় তার বাড়িতে থাকে। তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে আনা সাপ দেখতে এখন প্রতিনিয়ত তার বাড়িতে মানুষ ভিড় জমায়। তার বাড়িটি এখন সাপওয়ালার বাড়ি হিসাবে পরিচিত।
তারা আরো জানান, সাপ ধরার অনুরোধ জানিয়ে তার কাছে প্রতিনিয়ত মোবাইলে কল আসে। মানুষের বিপদ দেখে বসে থাকতে পারেন না, তাই ছুটে যান সাপ ধরতে। সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে এক লোক তাকে সাপ ধরতে নিয়ে যায়। তিনি যেসব বিষধর সাপ বাড়িতে নিয়ে আসেন সেগুলো রাখারও কোনো জায়গা নেই। প্লাস্টিকের বস্তা অথবা টিনের বাক্সে সেগুলো সংরক্ষণ করেন। খাবার অভাবে এক দেড়মাসের মাথায় অনেক সাপ মরে যায়। তাই ধরে আনা সাপগুলো সংরক্ষণে ব্যবস্থা করে দিতে তারা সরকারের কাছে দাবি জানান।
ইদরিছ আলী দুঃখ করে বলেন, আমি যেসব সাপ ধরি তার অধিকাংশই বাড়ির মালিকরা মেরে ফেলেন। তখন আমার খুব খারাপ লাগে। আমার নিজের থাকার ঘরই নাই সেখানে সাপগুলো ধরে এনে কিভাবে সংগ্রহ করে রাখব।
তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে বা ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ তাকে সাপের খামার করে দিলে সেখানে ধৃত সাপগুলো সংরক্ষণ করতে পারতেন। এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়তে আগ্রহীরা সাপওয়ালা ইদরিছ আলীর সাথে যোগাযোগ (মোবাইল ফোন নম্বর ০১৭৬৬-১৭৫৫৪২) করতে পারেন।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.