মাত্র ১০ সেকেন্ডের রোলে অ’ভিনয় করে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তার পর অ’ভিনয় প্রতিভার জোরে জায়গা করে নিয়েছেন বলিউডের প্রথম সারির কুশীলবদের মধ্যে। তিনি অর্চনা পূরন সিং।সিনেমায় ডনের বান্ধবী, খলনায়িকা, আইটেম নাম্বারের শিল্পী থেকে শুরু করে টেলিভিশন মেগার ‘লাফটার কুইন’। সব ভূমিকাতেই নিজের দক্ষতার ছাপ রেখেছেন তিনি।
১৯৬২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দে’হরাদূনে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর বাবা ছিলেন আইনজীবী। দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজে পড়ার সময়েই তিনি ঠিক করে ফেলেন মডেলিং করবেন।মডেলিং করতে করতেই সিনেমায় এক ঝলক উপস্থিতির সুযোগ। ১৯৮২ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘নিকাহ’ সিনেমা। এই ছবিতে একটি গানের দৃশ্যে দশ সেকেন্ডের জন্য সেলসগার্লের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
বিজ্ঞাপনে কাজ করার সময়েই জালাল আগার স’ঙ্গে আলাপ হয় অর্চনার। পরে জালাল আগার সূত্রে তাঁর পরিচয় ঘটে পঙ্কজ পরাশরের স’ঙ্গে।অর্চনা জীবনের প্রথম ছবি ‘জালওয়া’য় নায়ক ছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ। কিন্তু এই ছবির পরেও অর্চনা ইন্ডাস্ট্রিতে প্রত্যাশিত সুযোগ পাননি। মূলত বি বা সি গ্রে’ড সিনেমাতেই দেখা যাচ্ছিল তাঁকে। ক্যারিয়ার বাঁচাতে তিনি ঠিক করেন সাহসী ভূমিকায় অ’ভিনয় করলে, করবেন বড় ব্যানারেই।
ক্যারিয়ার শুরুর আগেই জীবনে বড় আঘা’ত পান অর্চনা। ভেঙে যায় তাঁর বিবাহিত জীবন। সেই সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে পড়েছিল যে, তিনি পুরুষদের উপর থেকে বিশ্বা’স হারিয়ে ফেলেছিলেন।পরে যখন তাঁর জীবনে পরমীত সেঠী আসেন, তাঁর প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ বলতে অনেক সময় নিয়েছিলেন অর্চনা। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হলেও অর্চনা বিয়ে করতে চাননি।
তিনি এবং পরমীত লিভ ইন করতেন। সে সময়ে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে বহু চর্চা হয়েছিল। তা ছাড়া তাঁর এবং পরমীতের বয়সের ব্যবধান ছিল সাত বছর। সেটাও ছিল বলিউডি গসিপের অন্যতম আকর্ষণ।ডিভোর্সি এবং সাত বছরের বড় অর্চনার স’ঙ্গে ছেলের সম্পর্কে সায় ছিল না পরমীতের বাবা মায়ের। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রেয়সীর হাত ছাড়েননি পরমীত।
যখন লিভ ইন করতেন, তখন অর্চনা পরিচিতি পেয়ে গিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। অন্য দিকে পরমীত চেষ্টা করে চলেছেন। ১৯৯২ সালে টেলিভিশনে একটি বড় কাজের সুযোগ পান পরমীত।সে দিনই তিনি অর্চনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। স’ঙ্গে স’ঙ্গেই রাজি হন অর্চনা। দু’জনে ঠিক করলেন বিয়ে হবে সে রাতেই। পুরোহিতকে ডেকে দুই বন্ধুর উপস্থিতিতে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তাঁদের বহুতলের ছাদে।
বলিউডে কাজ করে গেলেও অর্চনা স্টিরিয়োটাইপড হয়ে যাচ্ছিলেন সাহসী দৃশ্যের অ’ভিনেত্রী হিসেবে। এই ছাপ ছেড়ে বার ‘হতে চাইছিলেন তিনি। কিন্তু অন্য রকম ভূমিকায় অ’ভিনয়ের সুযোগ তাঁর কাছে আসছিল না।
১৯৯৪ সালে ‘রাত কি গু’নাহ’- ছবিতে তিনি অ’ভিনয় করেন শেখর সুমনের বিপরীতে। অর্চনার অ’ভিনীত চরিত্রের নাম ছিল ‘ইন্সপেক্টর রেশমা’।কয়েক বছর কাটিয়ে দেওয়ার পরেও এই বি গ্রে’ড ছবিতে অ’ভিনয় করে পরে অনুশোচনা হয় অর্চনার। তিনি ঠিক করেন এ বার কাজ করবেন ছোট পর্দায়। ১৯৯৬ সালে ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ ছবিতে কারিশমা কাপুরের সৎ মায়ের চরিত্রে অ’ভিনয় করেন। এই ছবিতে খলনায়িকা হিসেবে নজর কাড়েন তিনি।
অন্তঃস’ত্ত্বা অবস্থায় এই ছবিতে অ’ভিনয় করেন অর্চনা। কিন্তু এক বারের জন্যেও তা বোঝা যায়নি ছবিতে। দীর্ঘ কয়েক বছর অ’ভিনয় করেও বলিউডের প্রথম সারিতে জায়গা পাননি। সেই সুযোগ তিনি পেলেন ১৯৯৮-তে। অ’ভিনয় করলেন করণ জোহরের ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ ছবিতে। এই ছবিতে তিনি মোহময়ী শিক্ষিকা, ‘মিস ব্র্যগেঞ্জা’ চরিত্রে অ’ভিনয় করেন। এরপর থেকে কৌতুক চরিত্রেই নিজেকে মেলে ধরেন।
‘মোহাব্বতে’, ‘ওয়ে লাকি! লাকি ওয়ে!’, ‘মেরে বাপ পেহলে আপ’, ‘মাস্তি’-র মতো ছবিতে নতুন ভূমিকায় অর্চনার অ’ভিনয় পছন্দ হয় দর্শকদের। এই ছবিগু’লির সূত্রেই ছোট পর্দার বিভিন্ন স্ট্যান্ড আপ কমেডি শোয়ের অংশ হয়ে ওঠেন তিনি।
অতীতের সাহসী দৃশ্যে অ’ভিনয় করা অর্চনা ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন কৌতুকাভিনেত্রী হিসেবেও। এখন কাপিল শর্মা’র জনপ্রিয় শো ‘কমেডি উইথ কাপিল’ এ বিচারক হিসেবে দেখা যায় তাকে। তিনি বিশ্বা’স করেন, সিনেমা’র তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি পেয়েছেন ছোট পর্দায়। তাঁর ধারণা, শুধু সিনেমায় অ’ভিনয় করে গেলে হয়তো আজ হারিয়েই যেতেন ইন্ডাস্ট্রি থেকে।