সিমেন্ট ও ইট-পাথর দিয়ে বাড়ি বানানোর কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি অভিনব বটে। অথচ এই অভিনব উপায়ে বাড়ি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সৌদি প্রবাসী আব্দুল আলিম। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল আর সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছে আলিমের শখের বাড়ি। অল্প খরচ, পরিবেশবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন এই বাড়ি ইট-পাথরের বাড়ির চেয়ে বেশি আরামদায়ক হবে বলে মনে করছেন তিনি।
এদিকে বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরির কথা জানতে পেরে প্রতিদিনই আশপাশের মানুষ এক নজর দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন।
জেলার চৌহালী উপজেলার খুরকী গ্রামের মাওলানা আব্দুল হামিদের ছেলে আব্দুল আলিম।
বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে আব্দুল আলিম বলেন, ‘টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর এলাকায় বোতলের তৈরি বাড়ি আমি দেখেছি। ওই বাড়ি দেখে আমার শখ জাগে। পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে বোতল সংগ্রহ করতে শুরু করি। তারপর বাড়ি নির্মাণের কাজে হাত দেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিত্যক্ত বোতলগুলো উপজেলার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার ভাঙ্গারির দোকান থেকে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে কিনে এনেছি। ১৮০০ স্কয়ার ফিটের বাড়ি নির্মাণে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। আমি প্রথম সিরাজগঞ্জ জেলায় এ ধরনের বাড়ি নির্মাণ করছি।’
বাড়িটি একনজর দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ
চৌহালী সরকারি কলেজের সাবেক প্রভাষক আব্দুল সালেক বলেন, ‘বোতলের ভিতরে বালু থাকায় বৈদ্যুতিক শট সার্কিট ও অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এছাড়া বাড়িটি ভূমিকম্প সহায়ক। বোতলের তৈরি বাড়ি শীত ও গরম সহনশীল হয়ে থাকে।‘
মাওলানা আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমার ছেলে সৌদি আরবে চাকরি করে। ওর কথা শুনে মনে হয়েছিল টাকাগুলো নষ্ট হবে। এই ভেবে মন খারাপ হয়েছিল। পরে বাড়ি তৈরির নির্মাণ কাজের গুণগত মান দেখে আমাদের ভুল দূর হয়েছে। বাড়ি দেখে সবাই প্রশংসা করছেন।‘
বাড়ি নির্মাণের প্রধান কারিগর আলম শেখ বলেন, ‘বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ এই প্রথম করছি। প্রায় ১৮০০ স্কয়ার ফুটের এক তলা বাড়িতে চারটি বেড রুম, একটি ডায়নিং, রান্না ঘর ও পৃথক দুটি বাথরুম থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাড়িটি দৃষ্টিনন্দন করতে উপরে রঙিন টিন ব্যবহার করা হবে। বাড়ি নির্মাণে প্রায় ৪২ থেকে ৪৫ হাজার বোতল লাগছে। এর মধ্যে দুই লিটার, এক লিটার ও আধা লিটারের বিভিন্ন রঙের বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে।’
চৌহালী উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের তথ্য নেই। কিন্তু কম খরচে পরিবেশবান্ধব এ ধরনের বাড়ি তৈরি করতে পারলে মানুষের উপকার হবে। এজন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে।’