আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ্য

‘আপনি নিজ যোগ্যতায় আসেননি। আপনাকে আমরা বসিয়েছি, আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ্য।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতারকে নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ করে এভাবেই শাসিয়েছেন কতিপয় শিক্ষার্থী। শুক্রবার চবিতে পদোন্নতি বোর্ডে এক শিক্ষকের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা এমন আচরণ করেন।

এ ঘটনার একটি ভিডিও শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। উপাচার্যকে শাসানো দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন চবির ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা শাখাওয়াত হোসেন এবং অপরজন শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতা ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী তাহসান হাবীব। এছাড়া যে শিক্ষককে নিয়ে এই বাকবিতণ্ডা হয়েছে তার নাম কুশল বরণ চক্রবর্তী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

৪ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তাহসান হাবীব উপাচার্যকে বলছেন, ‘স্যার আপনাকে আমরা বসিয়েছি। আপনি আমাদের কথা মানতে বাধ্য।’ এরপর উপাচার্য বলেন, ‘না’ । উপাচার্যের এই কথার সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত শিক্ষার্থীরা হইচই শুরু করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক নেতা শাখাওয়াত হোসেন উপাচার্যকে বলেন, ‘এখানে আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি।’ এরপর আবারও বলেন, ‘আপনাকে আমরা এনে এখানে বসিয়েছি। আপনি এখানে নিজ যোগ্যতায় বসেননি।’ তখন উপাচার্য বলেন, ‘কী করেছি আমি?’ তাহসান তার উত্তরে বলেন, ‘আপনারা কেন কুশল বরণকে প্রমোশন দিচ্ছেন? আমাদের রক্তের সঙ্গে এবং আমাদের বিপ্লবের সঙ্গে বেইমানি করে।’ এরপর একাধিক শিক্ষার্থী হট্টগোল করে ওঠেন।

চবি সূত্র জানায়, শুক্রবার চবির সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতির সাক্ষাৎকার ছিল। এই সাক্ষাৎকার বাতিল ও কুশল বরণকে চাকরিচ্যুত করার দাবিতে দুপুরের পর থেকেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক খান তালাত মাহমুদকেও ওই অবস্থান কর্মসূচিতে দেখা গেছে। সেখান থেকেই বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপাচার্য কার্যালয়ে যান তারা।

এদিন উপাচার্যের উপস্থিতিতেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন শিক্ষক কুশল বরণ। পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক কুশল বরণকে প্রশাসনিক ভবনের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যান। এরপর প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে সহকারী অধ্যাপক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি বোর্ড বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন। এ ঘটনার পর চবি উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতারকে নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক মো. তালেক লিখেছেন- ‘আপনার ছাত্রদের সন্তান কিংবা নাতিসম বাচ্চারা আপনার সঙ্গে যা ব্যবহার করেছেন তাতে আমরা মর্মাহত। আমাদের ভুল না হলে আপনার যোগ্যতা ভিসির চেয়ে আরও বেশি।’

এ বিষয়ে জানতে মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।