আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি তার ব্যক্তিত্বের জন্য বরাবরই প্রশংসিত। মাঠে সবসময় সুশৃঙ্খল ও নির্বিবাদী তিনি। খেলা নিয়ে শিরোনামে আসলেও নিজের প্রেমকে খুব বেশি প্রকাশ্যে আনেননি এই তারকা খেলোয়াড়। বারবার নিজের নম্রতার পরিচয়ই দিয়েছেন মেসি।
মেসি একাধিকবার বিভিন্ন সাক্ষাতে তার জীবনে স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর অবদানের কথা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, স্ত্রী আন্তোনেল্লার প্রেরণা ও নিরন্তর উৎসাহ যদি না পেতেন তাহলে কখনো এতদূর আসতে পারতেন না তিনি।
বিশ্বকাপ নিয়ে পুরো আর্জেন্টিনা যখন উল্লাস করতে ব্যস্ত, সেই সময় দেখা যায় হাতের ইশারায় কাউকে ডাকছেন মেসি। পরে দেখা যায় দর্শক আসনে থাকা স্ত্রী, তিন সন্তান ও মাকে ডাকছিলেন। এরপর তারা মাঠে আসার পরে স্ত্রী আন্তোনেল্লার সঙ্গে বিশ্বকাপ হাতে ছবি তুলতে দেখা যায় মেসিকে।
আন্তোনেল্লার সঙ্গে তারকা খেলোয়াড়ের পরিচয় আজকের নয়। তাদের রোমাঞ্চকর রসায়ন লুকিয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে। যে শহরে মেসি ও আন্তোনেল্লার জন্ম। সেই পাঁচ বছর বয়স থেকে একে অপরকে চেনেন তারা।
আন্তোনেল্লা হচ্ছেন মেসির বাল্যবন্ধু, ফুটবলার লুকাস স্কাগিলারের আত্মীয়। মেসির খেলার সঙ্গীও। এরপর স্কুল-কলেজ পর্যন্ত আন্তোনেল্লাকে ভালো বন্ধু পরিচয় দিয়ে এসেছেন মেসি। খেলোয়াড়ের ঘনিষ্ঠজনদের মতে, আন্তোনেল্লাকে দেখার জন্যই নাকি বিভিন্ন অজুহাতে বন্ধুর বাড়ি যেতেন মেসি।
এক সময় তারা হঠাৎ করেই একে অপরের থেকে অনেক দূরে সরে যান। ২০০০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে সুদূর স্পেনের একটি ফুটবল ক্লাবের যুব অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য যান মেসি। তার পরিবারও স্পেনের শহর বার্সেলোনায় চলে যায়।
তবে ২০০৫ সালে একটি দুর্ঘটনার সূত্রে ফের কাছাকাছি চলে আসেন তারা। মেসি জানতে পারেন আন্তোনেল্লার প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে গাড়ি দুর্ঘটনায়। সমবেদনা জানানোর জন্য ছোটবেলার বন্ধুকে ফোন করেন তারকা খেলোয়াড়। এরপর কিছু দিনের জন্য নিজ শহর রোজারিওতে ফেরেন। সেই সময় শৈশবের শহরে শৈশবের বন্ধুত্বকেও ফিরে পান মেসি।
এবার শুধু বন্ধুত্বই নয়। সঙ্গে অনুরাগের ছোঁয়াও রয়ে গেল। মেসি নিজেই জানিয়েছিলেন, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় তারা একসঙ্গে বেড়াতে যেতেন। আর ২০১০ সালে আন্তোনেল্লাকে প্রথম প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই সময়ই প্রকাশ্যে এসেছিল তাদের প্রেমের কথা। এরপর ২০১৭ সালে রোজারিও শহরে জমকালো আয়োজনে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। বর্তমানে তারা তিন সন্তানের জনক। ২০১২ সালে প্রথম সন্তান থিয়েগো, ২০১৫ সালে দ্বিতীয় সন্তান মাতেও এবং ২০১৮ সালে ছোট সন্তান সিরোর জন্ম হয়।
আন্তোনেল্লা প্রথমবার যখন সন্তানসম্ভবা হয় সেই সময় ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে জয় লাভের পরে জার্সির ভেতরে বল নিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায় মেসিকে। স্ত্রীর পাশে থাকার বার্তা দেয়ার জন্যই অভিনব কাজটি করেছিলেন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়।
আন্তোনেল্লা পেশাগত দিক থেকে একজন সফল মডেল। মূল্যবান বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় তাকে। এছাড়া আর্জেন্টিনায় জনপ্রিয় একটি বুটিকও পরিচালনা করেন। এই বুটিক ব্যবসায় আরেকজন অংশীদার হলেন সোফিয়া বালবি। তিনি উরুগুয়ের প্রখ্যাত ফুটবলার লুইস সুয়ারেজের স্ত্রী।
২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে মেসি স্ত্রীর প্রশংসা করে বলেছিলেন, আন্তোনেল্লা খুবই ঠাণ্ডা মেজাজের একজন মানুষ। সব সমস্যার সমাধান সে কীভাবে করে তা ও ছাড়া কেউ বুঝতে পারে না। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা