পালিয়ে যাবার শেষ মুহূর্তে হাসিনা ও রেহানার মধ্যে যা ঘটেছিল

শেখ হাসিনা প্রবল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সেদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কারফিউ উপেক্ষা করে লাখ লাখ ছাত্র-জনতা গণভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এমন পরিস্থিতিতে তিন বাহিনীর প্রধানরা শেখ হাসিনাকে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। শেখ হাসিনা আরও বেশি বলপ্রয়োগ করে (মূলত আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণ) আন্দোলন থামানোর জন্য সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে চাপ দিলে তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানান।

উলটো তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার বিশাল মিছিলকে কোনোভাবেই থামানো যাবে না, তাই নিজের নিরাপত্তার জন্যই শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা উচিত। শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাও তাকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। প্রথমে এই অনুরোধে সাড়া দেননি তিনি। তবে শেখ রেহানা নাছোড়বান্দার মতো বার বার অনুরোধ জানাতে থাকলে এক পর্যায়ে তিনি পদত্যাগে সম্মত হন। পদত্যাগ করে সেদিনই তিনি বোন রেহানাসহ ভারতে আশ্রয় নেন। শেষ মুহূর্তের ওই বিষয়গুলো পুতুলের স্ট্যাটাসে উঠে এসেছে।

ফেসবুকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল লিখেছেন, ‘বার বার শেখ রেহানাকে চলে যেতে বলেন শেখ হাসিনা।

তুই চলে যা, আমি ওদের(আর্মি) বলে দিয়েছি আমাকে মেরে ফেলার পর যেন আমার বাবার কোলে আমাকে শুইয়ে দেয়। কিন্তু রেহানা প্রতিবারই অঝোরে কাঁদছিলেন আর সাফ জানিয়ে দেন শেখ হাসিনাকে রেখে তিনি যাবেন না।

কারণ রেহানা জানতেন হাসিনাকে রেখে যাওয়া মানে এটাই বড়বোনের সাথে তার জীবনের শেষ দেখা হবে না। রেহানা পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন, বড়বোন ছাড়া তাঁর আর কেউ নেই।

তাই কোনভাবেই ব্যবস্থা করতে না পেরে শেষে জয় এবং পুতুলকে দিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। অবশেষে ছেলে-মেয়ে ও একমাত্র ছোটবোনের জোরাজোরিতে শেখ হাসিনা ভারত সরকারের কাছে সহযোগিতা চায় যেন ভারতীয় বিমানে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়।

কিন্তু ভারত সরকার জানায় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তারা বাংলাদেশের আকাশ সীমায় ভারতীয় বিমান নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেনা তাই যেকোন উপায়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে ভারতের মাটিতে আসলেই তারা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

তারপর শেখ হাসিনা বাংলাদেশ নিজের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সেনাবাহিনীর কাছে ২দিন সময় চান কিন্তু সেনাবাহিনী তাকে মাত্র ৪৫ মিনিট সময় দেন।

যাবার আগে একবার ধানমন্ডি-৩২ এর বাসভবন ও টুঙ্গিপাড়ায় তার বাবার কবর দেখতে যেতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

কিন্তু সেনাবাহিনী তাকে সেটি থেকেও বিরত রাখে।

কর্মী ও দেশবাসীর জন্য একটি ভাষণ রেকর্ড করে দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাকে সেই সুযোগও দেয়া হয়নি।
এই দেশের মানুষের জন্য দিনরাত এক করে খেটে যাওয়া এক বাঙ্গালী লৌহ মানবী চাপের মুখে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন একখানা সাদা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে।

যার পুরো পরিবারকে এদেশেই হত্যা করেছিলো কিছু বিপদগামী সেনা কর্মকর্তা ।

আর এই দেশের মানুষের জন্যই জীবনের সবসুখ বিসর্জন দেয়া সেই বাঙ্গালী নারীকে শেষবারের মতো তার বাবার কবরটাও দেখতে দেয়া হয়নি।

অথচ তোমরা বলো সব দোষ তার?

অথচ এই মহিলা তোমাদেরকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো। আজ মানুষ খুন করে এই দাসত্বের শুরুটা উজ্জাপন করে নাও।

কয়েক বছর পরেই আবার শেখ হাসিনার জন্যেই কাঁদবে আর আফসোস করবে। সেদিন আর কি কোন লাভ হবে ???”

তখন বুঝবে দেশের মানুষ কি হারিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক রিপোর্ট থেকে এই উধৃতি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন পুতুল। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তার এনডিটিভিকে এ তথ্য জানিয়েছেন বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।