নেত্রকোণায় মহাবিপন্ন প্রজাতির একটি বনরুই উদ্ধার হয়েছে। পরে শনিবার (১৮ মে) সন্ধ্যায় প্রাণীটিকে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং-এর স্বেচ্ছাসেবকরা। এর আগে, শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলার কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের কচুগড়া গ্রাম থেকে বিরল এই প্রাণীটিকে উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কচুগড়া গ্রামের বাবুল মিয়ার বাড়ির পাশে পুকুরে প্লাস্টিক জালের সঙ্গে বিরল প্রজাতির এই বনরুই জড়িয়ে যায়। বিরল এই বন্যপ্রাণী পাওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজরে আসে সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং-এর স্বেচ্ছাসেবকদের। এদিকে বিরল এই বন্যপ্রাণী অধিক মূল্যে বিক্রির উদ্দেশে বাবুল মিয়া প্রাণীটিকে লুকিয়ে রাখেন। তবে প্রাণীটি উদ্ধারে মাঠে নামে স্বেচ্ছাসেবকরা। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টানা দুদিন অনুসন্ধানের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় বিরল প্রজাতির এই বনরুইটি উদ্ধার করেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং-এর সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত প্রসাদ জানান, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্র ধরেই জানতে পারি, পাহাড়ি সীমান্তবর্তী গ্রামে একটি মহাবিপন্ন ও দুর্লভ প্রজাতির বনরুই ধরা পড়েছে। আমরা খবরটি পাওয়ার পরপরই বিভিন্ন মাধ্যমে বাবুল মিয়াকে খুঁজে বের করি এবং প্রাণীটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টানা দুদিন অনুসন্ধান চালিয়ে কচুগড়া গ্রামের বাবুল মিয়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে বনরুইটিকে উদ্ধার করি।
তিনি আরো জানান, আমরা এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলে ৫০টি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছি। এর আগে আমরা অজগর সাপ ও বিরল লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করলেও বনরুই এবারই প্রথম পেয়েছি। মূলত, বনরুই বিরল প্রজাতির একটি প্রাণী। এর আগে এসব অঞ্চলে এরকম বন্যপ্রাণীর দেখা মিলল এখন একেবারেই হারিয়ে গেছে। সর্বশেষ গত ১২ বছর আগে দুর্গাপুর উপজেলার আগার গ্রাম থেকে আরেকটি বনরুই উদ্ধার করা হয়েছিল।
দুর্গাপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী জানান, কলমাকান্দার সীমান্তবর্তী এই পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী উদ্ধার হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সন্ধ্যার পর স্থানীয় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর স্বেচ্ছাসেবকরা একটি বিরল প্রজাতির বনরুই আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। পরে শনিবার সন্ধ্যায় স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতিতে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে প্রাণীটিকে হস্তান্তর করা হয়।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের জুনিয়র ওয়াল্ডলাইভ স্কাউট কামরুল ইসলাম জানান, এই বনরুইটি বিরল প্রজাতির। প্রায় দুই দিনের প্রচেষ্টায় সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং-এর স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাণীটিকে উদ্ধার করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। আমরা এই প্রাণীটিকে প্রথমেই চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাব। পরে এর আবাসস্থল এবং এ প্রাণী যেখানে থাকলে ভালো হয় আমরা সেই স্থানে এটিকে অবমুক্ত করব।