জ্বালানি তেল ছাড়া গাড়ি চলবে; কয়েক দশক আগেও এ ছিল চিন্তার বাইরে। অথচ সময়ের ব্যবধানে বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) দখল করে নিচ্ছে বাজার। এরজন্য ব্যাটারির উন্নতি হয়েছে, বেড়েছে গাড়ির মাইলেজ। এ অবস্থায় বলা যায় ইভির তোপে শেষ হচ্ছে তেলচালিত গাড়ির গল্প।
এক সময় স্মার্টফোন শখের পণ্য থেকে যেভাবে মানুষের নিত্যদিনের প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, হারিয়ে গেছে বাটন মোবাইল; একইভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি দিনকে দিন বিলাসবহুল পণ্য থেকে সাধারণ মানুষের পণ্য হয়ে উঠছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এক দশকের মধ্যে পেট্রোল, ডিজেল বা অকটেনে চলা গাড়ির চাহিদা নামবে তলানিতে; নতুন করে গল্প শুরু করবে লিথিয়াম ব্যাটারির বৈদ্যুতিক গাড়ি।
বড় ব্র্যান্ডগুলো আগ্রহী হচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়িতে
গাড়ির দুনিয়ায় বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বা ফেরারির মতো বাঘা বাঘা কোম্পানিগুলো এখন ভাবছে তেল ছেড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির দুনিয়ায় প্রবেশ করবে। এতদিন বৈদ্যুতিক গাড়ি মানে শুধু টেসলার জয়জয়কার হলেও বাজার এখন আর আগের মতো নেই। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে বৈদ্যুতিক গাড়ি এখন শুধু হালের ফ্যাশন না বরং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বড় একটি চমকও বটে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি টেসলার বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২৩ সালে পুরো সময় জুড়ে টেসলা মোট ১৮ লাখ গাড়ি বিক্রি করেছে। এই বৃহৎ সংখ্যক গাড়ির সিংহভাগ বিক্রি হয়েছে চীনের বাজারে। শুধু সাংহাইয়ের কারখানা থেকে উৎপাদিত ৯ লাখ ৪৭ হাজার টেসলা গাড়ি চীনারা কিনেছেন গত বছর।
সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি আমেরিকান কোম্পানি যেভাবে এশিয়ায় দিনকে দিন নিজেদের বাজার বিস্তার করছে, তাতে করে এ কথা স্পষ্ট বৈদ্যুতিক গাড়ি এখন শুধু পশ্চিমাদের বিলাস না, এশীয়দের প্রয়োজনীয় বাহনে পরিণত হয়েছে।
তবে গত বছর বৈদ্যুতিক গাড়ির দুনিয়ায় সবচেয়ে চমকপ্রদ খবর ছিল চীনা কোম্পানি বিওয়াইডির টেসলাকে টপকে যাওয়া। গত বছর শেষ প্রান্তিকে টেসলার মোট বিক্রিকে টপকে যায় বিওয়াইডি। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ২০ শতাংশ।
টেসলাকে টপকে বিওয়াইডির এই নতুন অভিযাত্রাকে সাময়িক ঝলক নয় বরং সক্ষমতার বার্তা হিসেবে দেখছে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিষ্ঠান মর্গান স্টানলি। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বে এবং বিশেষ করে এশিয়ার বাজারে দিনকে দিন যেভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়ছে, তাতে করে বিওয়াইডির ভবিষ্যত নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। চলতি বছরও কোম্পানিটি রেকর্ড সংখ্যক গাড়ি বিক্রি করবে। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে চলতি বছর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ।
চাহিদা বাড়ছে হুহু করে
বিওয়াইডির চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা দেখলেই বোঝা যায়, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে জ্বালানি তেলে চলা গাড়ির গল্প ফুরিয়ে যাবে। ২০২৪ সালে বিওয়াইডি মোট ৩৬ লাখ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। এতদিন বিওয়াইডি শুধু চীনা বাজারকেন্দ্রিক হলেও এবছর দেশের বাইরে ৫ লাখ গাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি যা ২০২৫ সালে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হবে বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে বিওয়াইডি।
ব্লুমবার্গ এনইএফের হিসাব থেকে দেখা যায়, বছর যত গড়াচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা তত বেশি করে বাড়ছে। ২০২৪ সালে পুরো বিশ্বে মোট ১ কোটি ৬৭ লাখ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ।
বিগত বছরের হিসাব থেকে দেখা যায়, ২০১৭ সালে বিশ্ববাজারে সর্বসাকুল্যে ১১ লাখ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে। ২০২০ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ লাখে। আর ২০২৩ সালে এ বিক্রির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৩৮ লাখ। শুধু পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, আগামী দিনে বৈদ্যুতিক গাড়িই হবে চলাচলের প্রধান বাহন আর জ্বালানি তেলে চলা যানবাহন হারাবে তার এতদিনের ধরে রাখা গ্রহণযোগ্যতা।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে গাড়ির বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির পরিমাণ ছিল ১৭ শতাংশ, যা চলতি বছর বেড়ে ২০ শতাংশে দাঁড়াবে।
অটোমোটিভ ডাইভের পূর্বাভাস মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব গাড়ির বাজার সর্বোচ্চ ৮৬ শতাংশ থাকবে বৈদ্যুতিক গাড়ির দখলে। কোনো কারণে যদি বিক্রি কমেও যায় তাতে করেও বিশ্ববাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির পরিমাণ হবে ৬০ শতাংশের ওপরে। শুধু চীনেই বৈদ্যুতিক গাড়ির পরিমাণ একইসময়ে ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে।
বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য বাংলাদেশ কি প্রস্তুত
বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজারে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি দাপিয়ে বেড়াবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতোমধ্যে যে চীনা কোম্পানি বিওয়াইডি টেসলাকে টপকে গিয়েছে, সেই একই কোম্পানি বাংলাদেশে নিজেদের প্রথম শো-রুম চালু করেছে। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অবস্থিত এ শো-রুমটি মূলত বাংলাদেশের বৈদ্যুতিক গাড়ির যাত্রায় প্রথম পদক্ষেপ।
বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পদক্ষেপ ও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমকে জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে গাড়ির বাজারে ৩০ শতাংশ থাকবে বৈদ্যুতিক গাড়ি। মূলত ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এখনই এ খাতে জোর দিচ্ছে সরকার।
বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান সময় সংবাদকে জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৪০ লাখ বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। মূলত জ্বালানি তেলের ওপর পরিপূর্ণভাবে চাপ কমাতে বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে ঝুঁকছে সরকার।
এরই মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ইভি কার নির্মাণে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত নীতিমালাও তৈরি হয়েছে। ঢাকায় স্থাপন করা হয়েছে ইভি চার্জিং স্টেশন। আগামী বছরের মধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আরও বেশ কয়েকটি চার্জিং স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে বলে জানা গেছে।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.