বৃক্ষমেলায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে বংশ মর্যাদাপূর্ণ খেজুর গাছ। এ নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে এখন আলোচনা তুঙ্গে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শুরু হওয়া জাতীয় এ বৃক্ষ মেলায় সবচেয়ে দামি খেজুর গাছটির দাম ১২ লাখ টাকা। অন্যটির দাম ১০ লাখ টাকা। এর পরই জিনসেং বট প্রজাতির বনসাইটির দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া মেলা শুরুর পর গত সোমবার পর্যন্ত ২২ দিনে মেলায় বিক্রি হয়েছে প্রায় ২১ লাখ গাছ।
আয়োজকরা জানান, এবারের মেলায় মোট ১২০টি স্টলের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ৮০টি প্রতিষ্ঠান ও নার্সারি অংশ নিয়েছে। মেলায় ঢাকার নার্সারির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নার্সারিগুলোও নিজেদের গাছের প্রদর্শনী ও বিক্রি করছে। তবে এর মধ্যে মেলা প্রাঙ্গণে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো দুটি খেজুর গাছ ও একটি বনসাই।
সবচেয়ে দামি খেজুর গাছটির মালিক আশুলিয়ার খান নার্সারি। এ নার্সারি স্টলটি মেলার ঠিক মাঝামাঝি অংশে। এর বিক্রিয়কর্মী জানান, বংশ-মর্যদাপূর্ণ এ খেজুর গাছটি সৌদি আরবের ‘আল বারহি’ জাতের। প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার এ খেজুর গাছে থোকায় থোকায় খেজুরও ধরেছে। ৮ বছর বয়সী এ খেজুর গাছের দাম ১২ লাখ টাকা। তবে এখন পর্যন্ত ৭ লাখ টাকা এর দাম উঠেছে।
একই নার্সারির আরেকটি খেজুর গাছের দাম চাওয়া হচ্ছে ৮ লাখ টাকা। বিক্রয়কর্মী জানান, সাত বছর বয়সের এ খেজুর গাছটিও আরবের ‘আল বারহি’ জাতের। ফলন বেশি হওয়ার কারণেই দাম বেশি।
মেলায় চাহিদার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে আছে জিনসেং বট প্রজাতির বনসাই। বনসাইটির বয়স ৩১ বছর। দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। এটি রয়েছে বরিশাল নার্সারিতে। মূল ফটক দিয়ে মেলায় প্রবেশের পর হাতের বাঁ দিকে দুই-তিনটি স্টল এগোলোই মিলবে এ গাছের দেখা। বিক্রেতা জানান, জিনসেং বট প্রজাতির এ বনসাইটি আনা হয়েছে চীন থেকে। সেই দেশে এ বনসাইটি ২৩ বছর ছিল। আর বাংলাদেশে বরিশাল নার্সারিতে আছে ৮ বছর ধরে।
মেলার আয়োজকরা জানান, এবারের মেলার শুরুর দিন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত মোট ২২ দিনে এতে বিক্রি হয়েছে ২০ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৪টি গাছ। পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গত ৫ জুন থেকে মাসব্যাপী শুরু এ মেলা চলবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত।
বন বিভাগের আয়োজনে এই মেলা দেশের সর্ববৃহৎ বৃক্ষ বেচাকেনা ও প্রদর্শনী কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন মেলা সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। প্রাকৃতিক আবহে সাজানো এ মেলায় প্রতিদিন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণায় অনেকটা বিনোদনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে।
এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা; অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ।’
মেলায় অংশ নেয়া নার্সারিতে পাওয়া যাচ্ছে দেশ-বিদেশের নানা জাতের গাছ। তবে এর মধ্যে আম গাছের সংখ্যাই বেশি। আমসহ এসব গাছ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মিলছে বিভিন্ন ঘর সাজানোর ইনডোর প্লান্ট, গাছ লাগানোর উপকরণ, গাছ বাঁচানোর সার, হরমোনসহ নানা সামগ্রী। এমনকি মেলায় কিনতে পাওয়া যাচ্ছে ঢাউস আকৃতির গ্রিন হাউজও। মেলায় গাছে পানি দেওয়ার নানান জিনিসও পাবেন। পাবেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি দেয়ার স্প্রিংকলার সিস্টেমও।
ডিপ্লোমা কৃষিবিদ নার্সারির একজন বিক্রয়কর্মী জানান, তাদের কাছে জহুরী চাপা ৫০ থেকে ১০০ টাকা, দেশী গাব ৫০ টাকা, বিলাতি গাব ৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাউফল ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, কর্পূর গাছ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, অশোক ১০০ টাকা, সর্পগন্ধা ১৫০ টাকা, খৈয়াম ৫০ থেকে ২০০, বাবলা ৫০ থেকে ১৫০ এবং ‘মাছিন্দা’ গাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়।
অন্য দিকে হোসেন নার্সারিতে বিক্রি হচ্ছে গোলাপজাম, কাউফল, বেত এবং ডেউয়া গাছ। এই স্টলে গোলাপজামের চারা রয়েছে ২ হাজার, কাউফলের দেড় হাজার, বেতের ৫০০ এবং ডেউয়ার চারা রয়েছে ৩ হাজার। হোসেন নার্সারিতে গোলাপজামের চারা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, কাউফল ২০০, বেত গাছ ১৫০ আর ডেউয়া ২০০ টাকায়।