কারাগারে থাকা কয়েদির সঙ্গে স্ত্রীকে দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ভিডিও কলের মাধ্যমে অশোভনীয় আলোচনা ও অনৈতিক প্রস্তাব দেন ঝালকাঠি জেলা কারাগারের তৎকালীন জেলার মো. আক্তার হোসেন শেখ। এমন অভিযোগে তাকে ‘লঘুদণ্ড’ দিয়েছে সরকার। শাস্তিস্বরূপ তার দুই বছরের দুটি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। আক্তার হোসেন শেখ বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেলার হিসেবে কর্মরত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মশিউর রহমানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ শাস্তির কথা জানান হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আক্তার হোসেন শেখ ২০২২ সালের ১২ জুন থেকে ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঝালকাঠি জেলা কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই ঝালকাঠি জেলা কারাগারের কয়েদি মামুনুর রশিদ (বন্দি নং ১৫৮/২৩) এর স্ত্রীর সঙ্গে জেলারের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন।
এরপর কয়েদির স্ত্রীর ব্যক্তিগত নম্বরে নিয়মিতভাবে কথা বলতে শুরু করেন অভিযুক্ত জেলার আক্তার হোসেন। কয়েদির স্ত্রীকে তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ভিডিও কলের মাধ্যমে অশোভনীয় আলোচনা করেন জেলার।
একপর্যায়ে কয়েদির স্ত্রীর সঙ্গে বসতঘরে রাতযাপনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন অভিযুক্ত আক্তার হোসেন শেখ। কিন্তু কয়েদির স্ত্রী এসব অনৈতিক কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেবেন না এবং স্বামীকে জেলখানায় কষ্ট দেবেন বলে কয়েদির স্ত্রীকে ভয়-ভীতি দেখান।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এমন আচরণের জন্য সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩ (খ) বিধি মোতাবেক জেলার আক্তার হোসেন শেখকে অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত করে বিভাগীয় মামলার অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী পাঠানো হয়। অভিযোগনামার জবাব দেন অভিযুক্ত জেলার এবং ব্যক্তিগত শুনানির জন্য প্রার্থনা করেন।
তবে অভিযোগনামার জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৭(২) (ঘ) বিধিমতে অভিযোগ তদন্তের জন্য চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. কামরুজজামাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১৫ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আক্তার হোসেন ও বন্দির স্ত্রীর অডিও, ভিডিও কথোপকথনের কণ্ঠ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়, যা অসদাচরণের শামিল। আক্তার হোসেন শেখের বিরুদ্ধে আনা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার ৪ (২) (খ) অনুযায়ী দুই বছরের জন্য দুটি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার দণ্ড দেওয়া হলো।