অফিসে বসেই মদ পান করতেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। ফার্মগেটের সরকারি বাসার ছাদে তিনি নিয়মিত মদ্যপানের আসর বসাতেন বলে জনপ্রশাসনে প্রচলিত আছে। এ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ-অসন্তোষও ছিল।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ‘তূর্য’ নামে একটি প্রমোদতরি নির্মাণ করেন কবির বিন আনোয়ার। সময় পেলেই সব আয়োজন নিয়ে রাজা-বাদশাহর মতো এই প্রমোদতরিতে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন অবলীয়ায়। আর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রী থাকলেও কাউকেই তিনি পাত্তা দিতেন না।
তার পিতা আনোয়ার হোসেন ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পিতার পরিচয়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন ছিলেন কবির বিন আনোয়ার।
কবির বিন আনোয়ার একজন মাদকসেবী। তিনি নিয়মিত ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা সেবন করতেন। চলাচল করতেন সিরাজগঞ্জের সব সন্ত্রাসীকে নিয়ে। কলেজজীবন থেকেই তিনি নিয়মিত গাঁজা সেবন করেন। পানিভবনে বসতেন মদের জলসা বানিয়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সিরাজগঞ্জে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস ‘যমুনা বিলাসে’ তার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মদ-গাঁজার আসর বসাতেন। রেস্ট হাউসের আশপাশের বাসিন্দারা এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছেও অভিযোগ করতেন।
অতিরিক্ত মাদক সেবনে অসুস্থ হওয়ায় তার স্ত্রী জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একজন খ্যাতিমান অধ্যাপকের কাছে চিকিৎসাসেবার জন্য নিয়ে যেতেন। তিনি ভারতেও মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসাসেবা নেন। ভারতের চিকিৎসকরা তাকে ৩ মাসের রিহ্যাবিলিটেশনের পরামর্শও দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যুগ্মসচিব হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকাবস্থায় তার ক্ষমতা প্রকট হতে থাকে। ওই বছরের ৭ এপ্রিল অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে ওইদিনই তাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক করে পদায়ন করা হয়। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত টানা ৬ বছরেরও বেশি সময় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
ওই বছরের ২২ মার্চ অতিরিক্ত সচিব থাকাবস্থায়ই কবির বিন আনোয়ারকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) করা হয়। এটা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই দাপটেই তিনি ড্যামকেয়ার অবস্থায় ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রীকেও তিনি তোয়াক্কা করতেন না। একা যা সিদ্ধান্ত নিতেন তাই বাস্তবায়ন হতো এখানে।
কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী চাকরি হারানোর ভয়ে কথা বলতে পারতেন না। এভাবে নিজের ইচ্ছামতো প্রকল্প ভাগিয়েছেন সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে। আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে যে কজন আমলা থেকে শত শত কোটি টাকা ভাগিয়ে নিয়েছেন তার মধ্যে কবির বিন আনোয়ার অন্যতম।