কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন আজ। ৭১ পেরিয়ে ৭২ বসন্তে পা দিয়েছেন। দিনটি উদযাপন উপলক্ষ্যে ‘গানের পাখি’খ্যাত এ শিল্পী বলেন, ‘এবারের জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। এখন আসলে জন্মদিন উদযাপনের তেমন কোনো আগ্রহ কাজ করে না। সময়টা অন্যরকম। এখন দেশ গড়ার সময়, নতুন করে দেশটা ঠিকঠাকভাবে গড়ে তোলার সময়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন সুস্থ রাখে, ভালো রাখে। আর সবাই যেন ভালো থাকেন নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে, আমিও এ দোয়া করি।’
জন্মদিনে কাকে সবচেয়ে বেশি মিস করেন, জানতে চাইলে এ সংগীতশিল্পী বলেন, ‘জন্মদিন এলেই আব্বা-আম্মা ও আমার বোনদের খুব মিস করি। কিন্তু তারপরও সবার ভালোবাসা পেয়ে আমি সে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। ঈদ এলে যেমন নতুন জামাকাপড় লুকিয়ে রাখতাম, জন্মদিন এলেও তাই করতাম। জন্মদিনে এসব কাপড় বের করতাম। আনন্দটাই ছিল অন্যরকম। পরিবারের মধ্যকার সে আনন্দটা মিস করি।’
সংগীত পরিবারে সাবিনা ইয়াসমিনের জন্ম। তার বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। তিনি চমৎকার রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। মা মৌলুদা খাতুন মুর্শিদাবাদের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ কাদের বক্সের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন। সাবিনা ইয়াসমিন ওস্তাদ পিসি গোমেজের কাছে একটানা ১০ বছর শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছেন। তবে মঞ্চে গান গাইতে উঠেছেন মাত্র ৭ বছর বয়সে।
বাংলা গানের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘জুঁই ফুল : সাবিনা ইয়াসমিন’। এতে উঠে এসেছে তার শিল্পী জীবনের নানা দিক। ৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে চ্যানেল আইতে প্রচারিত হবে শাইখ সিরাজ নির্মিত এ প্রামাণ্যচিত্রটি।
এ বিষয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘তথ্যচিত্রটি দেখেছি। দারুণ হয়েছে। আমার সংগীত জীবনের অনেক অজানা বিষয় উঠে এসেছে এখানে। যেমন, আমার নাম দিলশাদ ইয়াসমিন, এটা অনেকেই জানেন না; নায়ক জাফর ইকবাল ছোটবেলায় আমাদের স্কুলের অনুষ্ঠানে তবলা বাজাতেন, সে বিষয়গুলো এসেছে। এমন অনেক অজানা বিষয় নিয়ে বলেছি। আশা করছি শ্রোতা-দর্শক নতুন এক সাবিনা ইয়াসমিনকে খুঁজে পাবেন।’
প্রায় দুই ঘণ্টার এ প্রামাণ্যচিত্রে রয়েছে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার, ভিডিও, গান, শিল্পীর ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ। প্রামাণ্যচিত্রে সাবিনা ইয়াসমিনের গান নিয়ে কথা বলেছেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা, সুজাতা ও রোজিনা। রয়েছে এ প্রজন্মের কয়েকজন শিল্পীর কণ্ঠে সাবিনা ইয়াসমিনের ১২টি গান।
সাবিনা ইয়াসমিন ১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ সিনেমায় শিশু কণ্ঠশিল্পী হিসাবে, রবীন ঘোষের সুরে একটি গান গেয়েছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি বেতারে ছোটদের গানের অনুষ্ঠান ‘খেলাঘর’-এ নিয়মিত অংশ নিতেন। ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায় প্লেব্যাক শিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। গেয়েছেন অসংখ্য গান। এর মধ্যে রয়েছে আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গান।
সিনেমায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা হাজারেরও অধিক। পেয়েছেন একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৪ বার। তার প্রাপ্তির ঝুলিতে রয়েছে এইচএমভির ডবল প্লাটিনাম ডিস্ক, উত্তম কুমার পুরস্কার, বিশ্ব উন্নয়ন সংস্থা থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক পদক ও সম্মাননা।