আশির দশকের জনপ্রিয় নায়িকা সুচরিতা। এখনো প্রাণোচ্ছল, হাসিখুশিতে ভরপুর এক মানুষ। সুযোগ পেলেই আড্ডা দেন বন্ধুদের সঙ্গে, ছুটে আসেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বনভোজনে। গত বুধবার গাজীপুরে সমিতির আয়োজিত বনভোজনে প্রাণ খুলে কথা বলেন ঢাকাই ছবির এই জনপ্রিয় মুখ।
প্রশ্ন : কেমন আছেন, কীভাবে কাটছে সময়?
সুচরিতা : ভালো, তবে বয়স বাড়ছে, যে কারণে মাঝেমধ্যে শরীর খারাপ হয়। আর সময় কাটছে বাসায়। আপনাদের মা-বোনদের যেভাবে সময় কাটে, আমারও সেভাবেই কাটছে। যদিও বাসায় কাজের মানুষ আছে।
প্রশ্ন : চলচ্চিত্রে কম দেখা যায় কেন?
সুচরিতা : শুধু আমার কেন, এখন তো কোনো শিল্পীর হাতেই ছবি নেই। আমাদের চলচ্চিত্রের রাজপুত্র শাকিব খানের হাতেই বা কয়টা সিনেমা আছে? তা ছাড়া দু-একটা ছবির অফার আসে, সেখানে মায়ের চরিত্র করতে বলে।
আমি নিজেও মায়ের চরিত্রে কাজ করতে চাই। কিন্তু যে কারো মা তো হতে পারি না। আমার লুকের সঙ্গে যায়, এমন চরিত্রগুলো আমি করতে চাই। সেটা মা হলেও কোনো সমস্যা নেই।
প্রশ্ন : এখন চলচ্চিত্রের যে খারাপ সময় চলছে, এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
সুচরিতা : এখন শিল্পীদের অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ কম বলে আমার মনে হচ্ছে। সেজেগুজে ঘুরে বেড়ালেই শিল্পী হওয়া যায় না। ভালো শিল্পী দু–একজন হলেই ইন্ডাস্ট্রি চালিয়ে নেওয়া যায়। সে হিসেবে শিল্পীদের সংখ্যা কম।
তবে অনেক নায়িকাই দেখি ঘুরে বেড়াচ্ছে নানান সাজে। আসে, সেলফি তোলে, আমি দোয়া করে দিই। দর্শকদের সঙ্গে দিন-রাত এত সেলফি দিলে তো লোকে টাকা দিয়ে টিকেট কেটে সিনেমা হলে আর যাবে না।
প্রশ্ন : নতুন অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে আপনার ক্ষোভ আছে দেখা যাচ্ছে।
সুচরিতা : আসলে নতুনদের বলে কিছু হবে না। তারপরও বলি, আমরা যখন কাজ করেছি, তখন শটের সময় চোখে কাজল আর ঠোঁটে একটু লিপস্টিক লাগিয়ে শটে চলে যেতাম। এখন দেখি, অনেকের মেকআপই শেষ হয় না।
আরে কার কতটা মেকআপ লাগবে, সেটা তো গল্পের চরিত্রের ওপর নির্ভর করবে। চরিত্রটা বোঝো, ক্যামেরার সামনে সেই চরিত্রটা তুলে ধরো। আর ভালো অভিনেত্রীদের দর্শক এমনিতেই পছন্দ করে, তখন তাদের সবাই তারকা শিল্পী বলে। শিল্পী হতে না পারলে কেউ তারকা হতে পারে না। তাই বলব, শিল্পী হও।
প্রশ্ন : চলচ্চিত্রে অভিনয় সেভাবে করছেন না, নির্মাণ বা প্রযোজনার ইচ্ছা আছে কি?
সুচরিতা : আসলে আমার এত টাকা নেই যে ছবি নির্মাণ করব। তবে ভালো ছবি নির্মাণ হলে আমি ফ্রিতে কাজ করতে রাজি আছি। আমার মনে হয়, এ বিষয়টি নিয়ে শিল্পী সমিতিও কাজ করতে পারে। বনভোজনের দাওয়াত কার্ডে দেখলাম এত এত স্পন্সর, তাহলে আমরা ছবির জন্য কেন স্পন্সর পাচ্ছি না। জায়েদ খানকে আমার অনেক ভালো লাগে, সুন্দর ব্যবহার। অনেক কিছুই করছে সমিতির জন্য।
মাঝেমধ্যে আমাকে ফোন করে বলে, আপা সমিতিতে এই করলাম, সেই করলাম। আমার মনে হয়েছে, সুন্দর করে সমিতি সাজিয়ে লাভ নেই। সব বেঁচে দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করো। ছোট বাজেটের ছবি হলেও সমস্যা নেই। সেই ছবি দর্শক না দেখলেও সমস্যা নেই।
তার পরও ছবি নির্মাণ করো। লেখা হবে ছবিটি প্রযোজনা করছে শিল্পী সমিতি, আমরা সব শিল্পী দরকার হলে ফ্রিতে কাজ করব। ছবি হিট হলে শিল্পীরা সেখান থেকে টাকা নেবে। আসলে ছবিই যদি না হয়, বাকি সব মিথ্যা।
প্রশ্ন : বর্তমান সময়ের কোন নায়কের অভিনয় ভালো লাগে?
সুচরিতা : শাকিব খান আমাদের চলচ্চিত্রের রাজপুত্র। নিখুঁত অভিনয়, সুন্দর ব্যবহার। তারপর বাপ্পী চৌধুরী, আরিফিন শুভ, সাইমন তারাও ভালো করছে। এদের শেখার ইচ্ছা আছে, কাজ করার চেষ্টাও আছে। ওদের লুক সুন্দর, পছন্দ করবে। ছবির সংখ্যা বাড়লে দর্শক তাদের মূল্যায়ন করতে পারত।
প্রশ্ন : এখনকার নায়িকাদের মধ্যে কাদের ভালো লাগে?
সুচরিতা : অপু বিশ্বাস, দারুণ একজন অভিনয়শিল্পী ও দারুণ মানুষ। তারপর পরী মণি, যার ভেতর অভিনয় করার একটা ক্ষুধা আমি লক্ষ করেছি। মাহি আর আঁচল। তারাও ভালো কাজ করে। তবে আমার আসলে ছবি দেখা হয় না। হয়তো আরো অনেকেই কাজ করছে।
প্রশ্ন : আপনার মতে এখনকার সময়ের সেরা জুটি কোনটি?
সুচরিতা : শাকিব-অপু। আমার মনে হয়েছে, এই জুটিটা আল্লাহ নিজের হাতে তৈরি করে পাঠিয়েছেন। পর্দায় যখন তাদের গান করতে দেখি, আমার মনে হয় তারা সত্যিকারের জুটিই, গান গাইছে। অভিনয় করছে মনে হয় না। আমার অনেক পছন্দের জুটি তারা।
একটা সময় ছিল পছন্দের জুটি, এখন তারা পছন্দের পরিবার। দেখেছ কী সুন্দর একটি ছেলে? ইশ, তারা এখন আলাদা থাকছে কেন? তোমরা সবাই মিলে শাকিব-অপুকে এক করে দাও না, প্লিজ। তোমরা সবাই মিলে ধরলে আর না করতে পারবে না।