এফডিসিতে বান্ধবীর সাথে ঘুরতে এসেছিলেন তিনি। সেই থেকে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। চলচ্চিত্রে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে কাজ করছেন নাসরীন। আলোচনা-সমালোচনা সবই হয়েছে তাকে ঘিরে। তবে শেষমেষ খেতাব পায় অশ্লীল নায়িকা হিসেবে। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে পুরোপুরি বানিজ্যিক কারণে ব্যবহৃত হয়েছিলেন তিনি।
চলচ্চিত্রের সোনালি দিন দেখেছেন।বহু সুপারহিট ও কালজয়ী সিনেমার অংশ তিনি। নব্বই দশকে নায়ক-নায়িকারা যতটা জনপ্রিয় ছিলেন তার চেয়ে কম পরিচিত ছিলেন না অভিনেত্রী নাসরিন।
রুপালি পর্দায় এই অভিনেত্রীর অভিষেক হয় ১৯৯২ সালে ‘অগ্নিশপথ’ ছবির মাধ্যমে। তারপর কৌতুক অভিনেতা টেলিসামাদের সঙ্গে জুটি হয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। তবে দিলদারের জুটি হিসেবে নাসরিনের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। সিনেমার প্রচারে মাইকে মাইকে বলে বেড়াতেন দিলদারের নায়িকা নাসরিন। দর্শকও এই পরিচয়ে গ্রহণ করেছিল নাসরিনকে।
তবে অ’শ্লী’ল তকমা নিতে নারাজ। কারণ যখন যে জোয়ার আসে তাতে অনেক সময় অভিনয় শিল্পীদের কিছু করার থাকে না। এমনটাই বিশ্বাস এই নায়িকার। সম্প্রতি কথা বলেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ক্যারিয়ার নিয়ে। সেখান থেকে চু’ম্বক অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
প্রতি বছরই তিনি কোরবানি দিতেন, গরিব ও অসহায়দের সাহায্য করতেন। কিন্তু গত তিন বছর ধরে কোরবানি দিচ্ছেন না নাসরিন। কেন দিচ্ছেন না তা তিনি জানাননি। প্রথমে ডিপজলের সাথে গান করত চাননি তিনি। ‘কুত কইরা দিমু’ গানটি ভালো লাগেনি নাসরিনের। পরে ডিপজলের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে তিনি গানটিতে কাজ করেন।
স্মৃতিচারণ করতে করতে এক সময় নাসরিন বলেন- শুধু মাত্র চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে অনেক পরিচালক, অভিনিয় শিল্পী ও টেকনিশিয়ানরা মুড়ি খেয়ে থেকেছে। মুখ ফুটে কখনোও কিছু বলেনি। কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার শুটিংয়ে সালমান ভাই আমাকে মুটকি বলায় আমি তাকে ঢিল মেরেছিলাম, তখন আমি উনাকে চিনতাম না। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে শাবনাজের নায়িকা থাকার কথা। শিডিউলের কারণে মৌসুমিকে নিয়েছে পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান।
শুরুটা হয়েছিল দিলদার ভাইয়ের সাথে তাই আমাকে কেউ নায়িকা হিসাবে নিতে চাইতো না। অনেক নায়ক বলতো ও তো দিলদারের নায়িকা ওর সাথে অভিনয় করবো না। ওর সাথে অভিনয় করলে আমার ক্যারিয়ারের সমস্যা। অভিনয় জীবনে আমাকে কেউ খারাপ করতে পারেনি। দীর্ঘ ২৮ বছরে আমি কারও সাথে আপোষ করিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে জোর করে কিছু হয় না।
আইটেম গানগুলো আমি করতে চাইতাম না। আইটেম গান করতাম শুধু একটাই কারণে, আমি বসুন্ধরায় ফ্লাট কিনেছিলাম। সেই টাকা আমি কিস্তিতে পরিশোধ করতাম। একটানা ২০ বছর আইটেম গানে কাজ করে কখনও ১৫-২০ হাজারের বেশি সম্মানী পাইনি। অ’শ্লী’ল’তার সময় প্রযোজকরা কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা কাজ করেছি।
আমি মুনমুনকে প্রচুর হেইট করতাম। এরা এসে পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু দেখলাম যে না ওকে (মুনমুনকে) আসলে প্রযোজকরা হাফপ্যান্ট পরতে বলত। মুনমুন কান্না করতো ডিপজল ভাইয়ের বাসায়। বলত, সিনেমায় কাজ করতে এসেছি কী আপনাদের এই নোংরা কাপড় পরার জন্য? তখন ওরা (প্রযোজকরা) বলত এটা পরলে পরো না পরলে চলে যাও। তখন মুনমুনের ওপর আমার শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে যায়। এরপর থেকে আমি মুনমুনের সাথে কথা বলা শুরু করি। চলচ্চিত্র বাহির থেকে যতটা চকচকে, ভেতরটা আসলে ফাঁকা।
আমার ধ্যান-জ্ঞান সব কিছু চলচ্চিত্র। আমাকে কোটি টাকা দিলেও আমি এটা ছাড়তে পারব না। সবার আগে প্রাধান্য দিয়েছি আমি শিল্পী, আমার কাজ আগে। বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। আমি ছেলেদের প্রতি বিরক্ত ছিলাম। পরে ওকে (রিয়েল) ভালো লাগে। দেখলাম ওর সাথে আমার সব কিছু মিলে যায়, আমি যা চাই ও আসলে সেরকম, পরে আমি ওকে বিয়ে করতে চাই এবং ২০১২ সালে আমরা বিয়ে করি, এখন আমি দুই সন্তানের মা।
বর্তমানে হাতে তেমন কাজ নেই। সম্প্রতি একটি কাজ করেছি আনান্দ-অশ্রু সিনেমায়। আইটেম গানে আর কাজ করবো না। আমার এখন দুইটা বাচ্চা আছে। এখন আইটেম গান করা অসম্ভব। বিদায়ের সময় সিনিয়ার বা সরকারি কর্মকর্তারা, শিল্পীরা অনেক সম্মান পান কিন্তু যারা এফডিসি’র টুকটাক, স্বল্প ইনকামের কাজ করে বা জুনিয়ার শিল্পীরা তাদের ফুল দিয়ে সম্মান জানানো দূরের কথা মরে গেলেও জানতে পারি না। এমন আক্ষেপ নিয়ে মুনা ভাই সম্পর্কে বলছিলেন নাসরিন।