আজ, শনিবার অ-প্রেম সপ্তাহের চতুর্থ দিনটি ‘ফ্লার্ট ডে’ হিসেবে পরিচিত। যাকে দূর থেকে দেখে মনটা একটু উড়ু উড়ু বোধ করে, তার কাছে গিয়ে আরো একটু মিষ্টি কথা বলার দিন এটি। মাঝেমাঝে সুযোগ বুঝে আরো একটু বন্ধুত্বপূর্ণ আদানপ্রদান তো মন ভালো করেই।
কিন্তু লোকে যে বলেন, ফ্লার্ট করা ভালো নয়? তাতে মনের ভাবটা ঠিক প্রকাশ পায় না। অন্যের অস্বস্তি হতে পারে। তবে কি ‘ফ্লার্ট ডে’ উদ্যাপন করবেন, না করবেন না?
দেশ-বিদেশের মনোবিদেরা বলছেন, হালকা ফ্লার্টিংয়ে কোনো ক্ষতি নেই। বরং তা শরীরের জন্যও ভালো। চারপাশের চাপ খানিকটা যেন কম মনে হয় কাজের ফাঁকে কোনো মানুষের সঙ্গে খেলার ছলে কয়টা প্রেমপূর্ণ কথা হলে। আর তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলেই মনে করেন বহু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। কোনো বন্ধু কিংবা সহকর্মীর সঙ্গে তেমন হাসি-ঠাট্টা, সঙ্গে কয়েক পেয়ালা চা নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও মাঝেমধ্যে সাহায্য করে।
অনেক দিন একই সম্পর্কের মধ্যে থাকলে কারও মনে হতেই পারে, গুরুত্ব কমে গিয়েছে। হয়তো আপনার সব কিছু আর ততটা আলাদা ভাবে প্রাধান্য পায় না সঙ্গীর কাছ থেকে। তখন বাইরে কারও সঙ্গে দুইটি চাঞ্চল্যকর আদানপ্রদান একটু আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এই যে এক জন অন্যদের থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কাউকে, তাই আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।
রোজের নিয়মিত সম্পর্কগুলোর বাইরে আরো কারও কারও নজর টানে এই ধরনের প্রেম-প্রেম আদানপ্রদান। তাতে যেমন নিজের মন উৎফুল্ল থাকে, তেমন আবার আরো একটু ভালো হয়ে ওঠার ইচ্ছেও জন্মায়। কারও সঙ্গে ফ্লার্ট করতে গেলে তিনি আপনাকে ভালো বলছেন কিনা, সে দিকটা স্বভাবতই মনের মধ্যে কাজ করে।
ফলে কাজের জায়গাই হোক, বা কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ জমায়েত- নিজের ভালো দিকগুলো আরো ভালো করে তোলার ইচ্ছে জাগে। তারই সঙ্গে বাড়ে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষমতা। যখনই দেখবেন নতুন কেউ আপনাকে পাত্তা দিচ্ছেন, তখন এমনিতেই আরো বেশি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে ইচ্ছে করবে। যোগাযোগ নির্ভর এই সময়ে তাই ফ্লার্টিংয়ে দক্ষ হলে অনেক কাজেই ভালো হওয়া যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা।
তবে সব ভালোর মন্দও থাকে! তাই আপনার কোনো কথা যেন অন্যের ক্ষতি না করে ফেলে, সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার বলে মনে করেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বক্তব্য, এ ধরনের আদানপ্রদানে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেইটা মোটেই কাম্য নয়। ফলে শুধু নিজের ভালো লাগলেই হলো না। যার সঙ্গে সেই আলাপচারিতা হচ্ছে, তার কেমন লাগছে ভাবতে হবে। অনুত্তমা বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, এক জন হয়তো সবার সঙ্গেই খেলার ছলে প্রেম-প্রেম ভাব করে থাকেন, আর অন্য জন সেই ফ্লার্টিংকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেললেন। তার থেকে আরো গাঢ় সম্পর্কের আশা রাখলেন। তখন সমস্যায় পড়েন অন্য মানুষটি।’
মনোবিদের আরো বক্তব্য, অনেক সময়ে এমন আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুই ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কটি অসম। কাজের জায়গায় ঊর্ধ্বতন পদের কেউ, কিংবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কারও সঙ্গে ও রকম ‘ঢলে পড়ে’ কথা বলেন। সে সব ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েন অপর জন। কারণ, সেই আচরণ তার ভালো না লাগলেও, অনেকে তা প্রকাশ করতে পারেন না। ভয়ে পেয়ে চুপ করে থাকেন হয়তো। ফ্লার্টিংয়ের ক্ষেত্রে সম্মতি দুইদিক থেকে আসা জরুরি বলে মত অনুত্তমার।
ফলে ‘ফ্লার্ট ডে’ নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করার আগে খেয়াল রাখা ভালো অপর মানুষটির মনের দিকে। দুই তরফের সম্মতি যদি থাকে, তবেই ভালো কিছু মিলতে পারে এর থেকে!