সত্তর আশির দশকে বাংলা সিনেমায় ছিল নতুন জোয়ার। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলেই পরিবার আর পরিজন মিলে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের ছবি দেখার আগ্রহ চোখে পড়তো। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর এর মাঝপথে তাতে হানা দেয় অশ্লীলতা। এরপর পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বাংলাদেশী সিনেমাপ্রেমীরা। এ কারণেই কমতে থাকে দর্শক আর ধ্বংস হয় দেশি চলচ্চিত্র। অশ্লীলতার কালিযুগেও নায়ক সালমান শাহ, মান্না, ফেরদৌস, রিয়াজ, আমিন খান, রুবেল আর শাকিব খান সেসব কার্তি সময় কাটিয়ে নতুন দর্শকদের হল এ আনতে আগ্রহ তৈরী করেন।
পরে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ এবং মান্না মারা যাবার পর তা নিম্নমুখী হতে থাকে। তারপর সিনেমার এই ধ্বংসযজ্ঞ মধ্যেও নায়ক শাকিব খান দর্শক ধরে রাখেন বহুদিন। তার বহু চলচ্চিত্র হিটের তকমায় ভেসে যায়। সেই তমকায় ভাসতে থাকেন একাধিক নায়ক, নায়িকা এমনকি পরিচালক পর্যন্ত। এরপর পরীমণির মতো তথা-কথিত নায়িকার মতো কিছু তৃতীয় শ্রেনীর নায়িকাদের আর্বিভাবে চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের একটা বাজে ধরনের প্রভাব পড়তে থাকে। যা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকালেই দৃশ্যমান।
অনেকটা নিভুনিভু করেই যেন জ্বলছে আমাদের এই শিল্প। তবে ইদানিং কিছু নায়ক নায়িকাদের শো-রুমের ফিতা কাটা আর যাত্রায় অভিনয় যেন কফিনের গায়ে শেষ পেরেক বসিয়ে দিয়েছে। নাই আর কিছুই। বর্তমান বাজারে বছরে ৫০টির মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ আর শুভমুক্তির দেখা পেলেও দিনশেষে হিটের তকমা পায় একটি থেকে দুটি চলচ্চিত্র। বাকী সব থাকে মহরত আর ফাঁকা আওয়াজে।
এদিকে একাধকি সূত্রের খবরে জানা যায়, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার ইনবক্সে কাজের মেয়েকে নায়িকা বানানোর কথা বলে প্রযোজকদের টোপ দেখাচ্ছে। আবার কেউ কেউ একাধিকবার নায়ক-নায়িকাদের নাম মাত্র পারিশ্রমিক দিয়ে মহরতনামাতে নাম লিখাচ্ছেন। আসলে বর্তমানে কিন্তু একাধিক নায়ক-নায়িদের হাতে কাজ নেই। আর হাতে সিনেমা না থাকাতেই এসব ফিতা কাটা আর যাত্রায় শো বেড়ে গেছে। কিন্ত কোন নায়ক-নায়িকাদের সিনেমার কথা বলতে যাবেন, শুনবেন তাদের কোন সিডিউলই নেই। আসলে এদের এই ফিতা কাটা ছাড়া তেমন কোন কাজ নেই
এছাড়াও অনেক নবাগতা নায়িকা হবার আগেই বড় বড় ফাইভ স্টার হোটেলগুলিতে চেকিং দিয়ে ছবি ছাড়তে দেখা গেছে ফেসবুকে আর তাই দিয়ে করতে দেখা গেছে বাসার বাথরুম পর্যন্ত টাইলস ।` সূত্রটি স্থিরমনেই বলেন, `আসলে এই চলচ্চিত্রে অঙ্গণে অভিশাপ লেগেছে। এতে ধ্বংস অনিবার্য। ধ্বংস হোক। কারণ ধ্বংসের পর আবার শুরু হয়। বর্তমানের নায়িকাগুলি পরীক্ষিত ফ্লপ। তাহলে কেন তারা তাদেরকে নিয়ে সিনেমা বানায়। দোষ মূলত প্রযোজক আর পরিচালকদের। এতো আবেগ কেন এদের? তা জানা নেই কারও…
বর্তমানে সিনেমার নির্মাণ কমে গেলে বেড়েছে শো-রুমের ফিতা কাটা আর বিভিন্ন জেলায় শো’র খ্যাপ। খ্যাপ বলতে বোঝানো হয়েছে এক নায়ক গেলে তাতে আরও চৌদ্দ নায়িকা-নায়িকার ভাড়ায় সঙ্গী হওয়া। ইদানিং তাদের দেখা-দেখির ভীড়ে যুক্ত হয়েছে বর্তমান চলচ্চিত্রের সুপারস্টার নায়ক শাকিব খান! দেশসহ বিদেশে মাত্র ৩ লক্ষ টাকায় খ্যাপ মারতে দেখা গেছে।
বছর দুয়েক আগে এফডিসিতে শুটিং করার সময় এসকল বিষয় নিয়ে শাকিব খানকে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলে উঠেন, ‘একজন নায়ক হলো দর্শকদের বহুল আকাঙ্ক্ষা। আমাদের সহজে সামনে সামনি দেখলে কেউ আর প্রেক্ষাগৃহে টাকা দিয়ে দেখবেন না। তাই তিনি সিনেমার বাইরে তেমন কোন অনুষ্ঠানে যুক্ত হন নি।’
সেই সময় তিনি আরও বলেন, ‘একটি সিনেমা চলাকালিন একজন দর্শক সেই নায়কের মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নেন। সেই সময় তিনি নিজের নায়কের আসনে বসেন। যখন নায়কের সাথে মিলে যায় তখন সেই নায়কের ভক্ত তৈরী হয়। তারা তো সব সময় চাইবেই প্রিয় নায়ককে সামনা সামনি দেখতে, সেলফি তুলতে। যখন বারংবার তাকে যেকোন যায়গায় দেখতে পাবে তখন তার সিনেমা কখনই আর হিটের মুখ দেখবে না। বরং ফ্লপ হবে। এই জন্য তার ছবি ছাড়া অন্য কোন নায়কের ছবি চলেনা বলেও তখন তিনি দাবি করেন।’
তবে অনেকেই দাবি করেছেন শো-রুমের ফিতা কাটা আর খ্যাপ মারা শেষ হয়েছে জায়েদ খানের শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হবার পর থেকে। তাকেই প্রথম পুলিশ বাহিনীর অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খ্যাপ মারতে দেখা যেত। বর্তমানে তার হাতে তেমন কোন ক্ষমতা না থাকায় এসব থেকে বহুদূরে আছেন এ নায়ক। তবে শো-রুমের ফিতা কাটার শীর্ষে রয়েছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। এই নায়িকা দোকানের ফিতা কাটা থেকে শুরু করে গ্রামের কাঠের ফার্নিচার এমনকি বিভিন্নস্থানে মেলার ফিতাও কাটতে দেখা যায় তাকে। তার প্রমাণ কাল-পরশু ধানমন্ডির একটি মেলার ফিতাও কাটতে দেখা যাবে তাকে।
তাকে নিয়ে সিনেমাপ্রেমী আহাদ নামে একজন বলেন, ‘শাকিব খানের সাথে ঘর-সংসার ভাঙ্গার পর তার মূলত সংসার চালাতে হিমশিত খেতে হয়। তাছাড়া শাকিব খান ছাড়া এই নায়িকার ছবি তেমন হিটও নেই আর তেমন চলেও না।
দর্শক জনপ্রিয়তা জীবনে যা পেয়েছিল সেটি ছিল শাকিব খানের জন্য। কারণ যেকোন নায়িকার সাথে শাকিব খান সিনেমা করলে শাকিবিয়ানরা দেখবেই বলে দাবি করেন তিনি। তার চাক্ষুস প্রমাণ নায়িকা বুবলী। তিনি এটাও দাবি করেন এই নায়িকার নাকি অভিনয়ই হয় না। এমনকি এই সিনেমাপ্রেমী নায়িকার তকমা লাগিয়ে সব থেকে বেশি বিদেশে ট্যুরে এগিয়ে রেখেছেন নায়িকা অধরা খান আর পরীমণিকে।
অন্যদিকে ফিতা কাটার তীর ছুড়েন নায়ক নিরব আর ইমনের দিকে। তারাও এই ফিতা কাটা আর খ্যাপ সংগ্রহের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন বলে দাবি করেন সিনেমাপ্রেমী আহাদ।
এ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচালক, প্রযোজক দেলোয়ার জাহান ঝন্টুকে আমার সংবাদকে মুঠোফোনে দুঃখ প্রকাশ করে জানান, ‘আমার নতুন সিনেমার জন্য নায়িকা খুঁজে পাইনা। তারা ব্যস্ত থাকেন ফিতা কাটা নিয়ে। তাদেরকে আসলে নায়িকা বলেন কারা? তারা নিজেই নিজেকে নায়িকা বলে এসব করছে।’
শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করে একাধিক ছবি হিট দিয়েছেন তিনি তো নায়িকা? এমন কথার প্রেক্ষিতে ঝন্টু বলেন, ‘অপু অপু বিশ্বাস মুটকি হয়ে গেছে। তার ছবি তো এখন চলে না। তার ফিতা কাটা ছাড়া আর কি কাজ আছে।’ বর্তমানে এই পরিচালক ঢাকার বাইরে আছেন। এসে সামনা-সামনি কথা বলার কথাও জানান। এভাবে চলতে থাকলে শেষ কোথায়? আসলে কেউ জানেনা এই শেষ কোথায়!!