এভাবে পেটানো আমি জীবনেও দেখিনি

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাত দল ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় গরু ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নারী, বাদ যায়নি কেউ। এ ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, ব্যারিকেড দিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি গাড়ি থামিয়ে ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালায় ডাকাত দল। পথচারী ও গাড়িচালক কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে পালিয়ে যায় তারা। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সন্তোষপুর কনটেক মিলের (পোল ফ্যাক্টরি) কাছে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত কয়েকজন জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানা, জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কের কনটেক মিলের কাছে সড়কের ওপর খেজুর গাছ ও বিদ্যুতের পোলসহ ট্রলি রেখে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে ডাকাত দল। ওই ডাকাত দলে ১৫ থেকে ১৬ জন ছিল। তাদের সবার মুখ গামছা ও মাফলার দিয়ে ঢাকা ছিল। অধিকাংশ হাফ প্যান্ট ও লুঙ্গি পরিহিত ছিল। এ সময় ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পথচারী ও গাড়িচালকদের দেশীয় অস্ত্র রাম দা ও হাঁসুয়া দিয়ে জিম্মি করে লুট শুরু করে। কয়েকজনকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে জখমও করে তারা। সবার কাছে থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।

বৃহস্পতিবার ছিল সাপ্তাহিক শিয়ালমারি পশুহাট। এ দিনকে টার্গেট করেই ডাকাত দলের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়ক দিয়ে বাড়ি ফেরা গরু ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ বাদ যায়নি ডাকাত দলের কাছ থেকে। যার কাছে যা ছিল সর্বস্ব লুটে নিয়েছে ডাকাতরা।

ডাকাত দলের অস্ত্রের আঘাতে জখম আব্দুল ওয়াহেদ নামের এক ট্রাকচালক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হরিণাকুণ্ডু থেকে সরোজগঞ্জ-আন্দুলবাড়ীয়া হয়ে জীবননগর ফিরছিলাম। সন্তোষপুর সড়কের কনটেক মিলের অদূরে পৌঁছালে দেখতে পাই সড়কের ওপর খেজুর গাছ ও বিদ্যুতের পোলসহ ট্রলি আড়াআড়ি করে রাখা রয়েছে। আমি গাড়ি থামাতেই ১৫ থেকে ১৬ জন মুখোশ পরিহিত ব্যক্তি আমাকে রাম দা দিয়ে পিঠে ও গলায় কোপ মারে। আমার হেল্পার রাজুকেও মারধর করে। পরে আমার কাছে থাকা ট্রাকের ভাড়া মারা ১৫ হাজার টাকা তারা ছিনিয়ে নেয়।’

রুমন নামের এক ট্রাকের হেল্পার বলেন, ‘সড়কের ওপর ব্যারিকেড দিয়ে ট্রাক, আলমসাধু, পাভিভ্যান, মিশুক, মোটরসাইকেলসহ প্রায় ৩০টির মতো গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করে তারা। ডাকাতরা অনেকজনকে কুপিয়েছে। আবার অনেককে বেধড়ক পিটিয়েছে। এমন পেটানো আমি জীবনে দেখিনি। তারা আমার কাছ থেকে নগদ ৭ হাজার টাকাসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে। ভ্যান-মিশুকের মহিলা যাত্রীদের কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা কেড়ে নিয়েছে।’

ডাকাতির শিকার এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রাতে এভাবে ডাকাতি হবে, ভাবতেও পারিনি। এমনিতেই শিয়ালমারি পশুহাট ছিল, সেখান থেকে সবাই বাড়ি ফিরছিল। এ সড়কে অবশ্যই পুলিশি টহল থাকা উচিত ছিল। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় এমন ডাকাতের ঘটনা ঘটল।’

এ বিষয়ে জানতে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসানকে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা জানান, সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করে টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে ডাকাত দলের সদস্যরা। আমিসহ পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে এসেছি। ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে আমরা আমরা কাজ শুরু করেছি।