আমাদের দেশের অন্যতম পরিচিত ফলের নাম কলা। সাগর, সবরি, চম্পা, অগ্নিশ্বর, কাঠালী, দুধসর কত ধরনের কলাই তো পাওয়া যায়। কিন্তু এমন কলার কথা শুনেছেন কি যে কলা তিন-চারজন মিলে খেয়েও শেষ করা যায় না।
শুনে অবাক হচ্ছেন! কথাটি মিথ্যা নয়। বিশ্বের বুকে এমন কলাগাছও রয়েছে যে গাছে আমাদের দেশের প্রায় ৮-১০ গুন বড় কলা জন্মে। এমন গাছ ইন্দোনেশিয়ায় দেখা যায়। দেশটির পশ্চিম পাপুয়ার দুর্গম আরাকাফ পর্বতে প্রায় ১০ হাজার বছর পূর্ব থেকেই এমন গাছ রয়েছে বলে প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা। পাপুয়ার বনাঞ্চলে আলো- অন্ধকারে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০- ৩৫০০ ফুট উচ্চতায় জন্মায় এমন কলা।
এই কলার স্থানীয় নাম ‘জায়ান্ট হ্যাইলেন্ড বানানা’। বাংলায় দৈত্যাকার পাহাড়ি কলা। শুধু কলা নয়, গাছগুলোও অনেক বড়। এক একটি গাছ দেখতে তালগাছের চেয়েও বড়। গাছের সর্বোচ্চ উচ্চতা ৯৮ ফুট। গাছের পাতাগুলো ১৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। অত্যাধিক উচ্চতার কারণে এই কলা কাঁচা কিনা পাকা দেখা সম্ভব হয় না। সিন্দ্রাওয়াসি পাখি যখন কলা খেয়ে নিচে ফেলতে শুরু করে তখন স্থানীয়রা বুঝতে পারে কলা পেকেছে।
গাছ থেকে কলা পেরে আনা কষ্টসাধ্য। দুই পাশে বাঁশ পুঁতে সেই বাঁশের সাহায্যে গাছে উঠে পাকা কলা কেটে নামানো হয়। কলা খেতে টক। কলার ভেতরে থাকে অনেক বীজ। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই বীজ রান্না করে খান। এর পাতা ব্যবহার করেন অনেকেই। পাতা ও গাছের আঁশ দিয়ে তৈরি করেন কুটির বা মাদুর।
গবেষকদের মতে, পাপুয়ার ভেতরের জঙ্গলের কালো ও বাদামী মাটিতে প্রচুর পরিমাণ লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম থাকে। বিশেষ গুণসম্পন্ন এই মাটি মূলত গাছের এমন অস্বাভাবিক বিকাশ ঘটায়।
স্থানীয়রা অনেকেই এই কলা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। এর একমাত্র কারণ নির্দিষ্ট আবহাওয়া ছাড়া এই কলাগাছ জন্মায় না।