বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ

বিএনপির দুই গ্রুপ রাজশাহী সড়ক পরিবহণ গ্রুপের কার্যালয় দখল করতে চায়। এতদিন আওয়ামীপন্থি পরিবহণ মালিকরা এ সংগঠনটি পরিচালনা করছিলেন। এখন বিএনপির দুই গ্রুপ সংগঠনটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর শিরোইল এলাকায় সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে কয়েকটি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। আহতদের নাম জানা যায়নি।

রাজশাহীর পরিবহণ গ্রুপের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী সড়ক পরিবহণ গ্রুপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ এতদিন আওয়ামীপন্থিদের দখলে ছিল। সম্প্রতি সংগঠনের সভাপতি নাজিমউদ্দীন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। তারপর গ্রুপের সদস্য বিএনপিপন্থি গৌতম মোহন চৌধুরী রাকেশ নিজেকে আহ্বায়ক ঘোষণা করেন। এদিকে নজরুল ইসলাম হেলাল নামের বিএনপিপন্থি আরেকজন আওয়ামীপন্থি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটোর কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন গত কয়েক দিন ধরে। হেলালকে সমর্থন করছিলেন নগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ। এ নিয়ে গৌতম ও হেলালের সমর্থকদের মধ্যে কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা ছিল। শুক্রবার তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গৌতমের সমর্থকরা শুক্রবার কার্যালয় দখলে নিয়ে বসেছিলেন। ওই সময় নজরুল ইসলাম তার সমর্থকদের নিয়ে কার্যালয় দখলে যান। এতে দেশি অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জ্বিত দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় কার্যালয়ের সামনে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভিডিও ধারণ করতে গেলে কয়েকটি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে দুপক্ষের ২০ জন আহত হন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সেনাবাহিনীর একটি দল গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

বিএনপির এক গ্রুপের নেতা গৌতম মোহন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে শনিবার দুপুরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। সাধারণ সম্পাদক দাবি করা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিএনপি সরকারের আমলে এ সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আওয়ামীপন্থীরা দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু গৌতম নিজেকে আহ্বায়ক ঘোষণা করে কার্যালয় দখলে রেখেছেন। আমি কার্যালয়ে গেলে ভেতর থেকে আমাদের ওপরে আগে হামলা হয়। তখন আমরাও প্রতিহত করি। আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

রাজশাহী সড়ক পরিবহণ গ্রুপের আওয়ামীপন্থী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগের পর থেকেই বিএনপিপন্থীরা অস্ত্রসশস্ত্র নিয়ে মালিক অফিস দখল করতে আসে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমরা ছেড়ে চলে এসেছি। এরপর বিএনপিপন্থীরা জোর করে দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা কাউকে দায়িত্ব দিইনি। এখন শুনছি অফিস দখল করতে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যেই মারামারি হয়েছে।’

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সড়ক পরিবহন গ্রুপে নির্বাচিত হয়েছিলেন নজরুল ইসলাম। সে সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাদের মেয়াদ থাকতেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়। সে অনুযায়ী নজরুলই নিয়ন্ত্রণ পাবেন। এমন দখলদারিত্ব খারাপ চর্চা। এগুলো করা ঠিক না। বিষয়টি আমরা দেখব। জানা গেছে, রাজশাহীর বিএনপি নেতা দুই গ্রুপের মধ্যেকার বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করছেন।