ধরা পড়ে যে দুই মন্ত্রীর ওপর দোষ চাপালেন আনিসুল, জানুন নাম

হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শেখ হাসিনা সরকারের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ডিবি হেফাজতে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন আনিসুল হক। প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে তারা দেশে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরির জন্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ওপর দোষ চাপিয়ে দেন।

ডিএমপি নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া হকার (পাপশ বিক্রেতা) শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয় সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে। পুলিশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মামলা তদন্ত করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডিএমপি সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতদের অপরাধ শুধু পুলিশ কেইসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শেয়ারবাজারসহ অনেক অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত সালমান এফ রহমান। সরকারের অনেক অপকর্মকে আইনি বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছেন আনিসুল হক। তাই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে হত্যা মামলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও আইনগত বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই রিমান্ডে হত্যা মামলার পাশাপাশি বিগত সরকারের অপকর্ম ও দুর্নীতিসহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা দিচ্ছেন অজানা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বুধবার তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তারা এখন ডিবি হেফাজতে আছেন। রিমান্ডের প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে তারা দেশে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরির জন্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ওপর দোষ চাপিয়ে দেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আনিসুল হক বলেন, ‘দেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর আমি একটি সমাধানের দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। আন্দোলন দমনে তারা খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিলেন। এছাড়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বাস্তবতা বোঝানো যাচ্ছিল না। এ কারণে আন্দোলন এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’

সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ডিবির এক কর্মকর্তা দুজনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেই দেশের এই অবস্থা।’ এ সময় তারা ছিলেন নির্বিকার।

বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। তারা বিশ্বাসই করতে চাচ্ছেন না যে এত তাড়াতাড়ি আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে।

এদিকে যে মামলায় সালমান-আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সেই মামলায় আসামি হিসাবে তাদের নাম নেই। যাদের অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়েছে এজাহাদের তাদের বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোক বলা হয়েছে। তাহলে কী সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হক বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট?

এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, মামলা হলো ফাস্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট। তদন্তের পরই প্রকৃত সত্য উঠে আসবে। যিনি এফআইআর করেন তিনি তার মতো করে ঘটনা বর্ণনা করেন। ওনি যা জানেন তাই প্রাথমিকভাবে উল্লেখ করেন। এজন্যই সেটির নাম প্রাথমিক তথ্য বিবরণী। তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা উঠে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো এমনিতেই হয়নি। কী কারণে ঘটেছে, কেন ঘটেছে সবই তদন্তে উঠে আসবে।