পালিয়ে যাবার পর প্রথমবারের মত যে আহবান জানাল হাসিনা

শেখ হাসিনা বলছেন, আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তিনি।

সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের বৈরী সময়ে যেখানে দলটি ও এর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, বাতিল হয়েছে ১৫ অগাস্টের সাধারণ ছুটি; সেখানে সজীব ওয়াজেদ জয় তার দেশত্যাগী মা শেখ হাসিনার নামে ‘জাতীয় শোক দিবস’ পালনের আহ্বান রাখা একটি বার্তা দিয়েছেন।

বার্তাটি জয় তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে সরাসরি তার মায়ের নামে পোস্ট করেছেন, যেখানে বক্তব্য শেষ হওয়ার পর শেখ হাসিনার নাম লেখা হয়েছে।

তাতে দেখা যাচ্ছে শেখ হাসিনা বলছেন, আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেছেন, “স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমার মত যারা বেঁচে আছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। আমি এই হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সাথে জড়িতদের যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।”

ছাত্র-জনতার প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তার পতনের মধ্য দিয়ে এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেই দিনটি স্মরণে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে ১৫ অগাস্টকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে এবং এ দিনে সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়।

তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, শেখ হাসিনার পতন ও দেশ ছাড়ার মাস অগাস্ট।

হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাত্র সংগঠনগুলো ১৫ অগাস্ট পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাদের সমর্থনে গঠন হওয়া অন্তর্বর্তী সরকার এবার জাতীয় শোক দিবসের সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে।

এ অবস্থায় শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি জাতীয় শোক দিবস পালনের বার্তা দিচ্ছেন।

মঙ্গলবার রাতে হাসিনাপুত্র জয় নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে দেশবাসীর উদ্দেশে তার মায়ের বার্তা তুলে ধরেন।

বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একই সাথে আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেসা, আমার তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেনেন্ট শেখ জামাল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার ছোট ভাই যার বয়স মাত্র ১০ বছর ছিল শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

“আমার একমাত্র চাচা মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু শেখ নাসের, রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন, পুলিশ অফিসার সিদ্দিকুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, কৃষি মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ, তার ১০ বছরের ছেলে আরিফ, ১৩ বছরের মেয়ে বেবি, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত, ভাইয়ের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শহীদ সেরনিয়াবাদ, ভাগ্নে রেন্টুসহ অন্যান্য অনেককে নির্মমভাবে ভাবে হত্যা করে।”

১৫ই আগস্ট যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, তাদের সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করার কথা তুলে ধরে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে যে নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলি তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে; ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ এমন কী অন্তঃসত্তা নারী পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিকসেবী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, পথচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।”

বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার বিচার চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে যে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছিল, সেই স্মৃতি বহনকারী বাড়িটি আমরা দুই বোন বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেছিলাম। গড়ে তোলা হয়েছিলো স্মৃতি জাদুঘর। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই বাড়িতে এসেছেন। স্বাধীনতার স্মৃতিবহনকারী এই জাদুঘরটি।

“অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে আপনজন হারাবার সকল ব্যথা-বেদনা বুকে চেপে রেখে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়ে প্রিয় দেশবাসী আপনাদের সেবা করে যাচ্ছি। তার শুভ ফলও আপনারা পেতে শুরু করেছেন।”

জয়ের পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে । আজ তা ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। আর যে স্মৃতিটুকু আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল, তা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। চরম অবমাননা করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি, আত্মপরিচয় পেয়েছি; স্বাধীন দেশ পেয়েছি। লাখো শহীদের রক্তের প্রতি অবমাননা করেছে। আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই।”

যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ অগাস্ট পালন করার আহ্বান রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মোনাজাত করে সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল করুন।”