ইয়াকুৎস্ক শহরের মানুষেরা

পূর্ব সাইবেরিয়ার ইয়াকুৎস্ক শহরটি শীতপ্রধান একটি শহর। এটি রাশিয়ার অধীন। এই শহরের তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। সম্প্রতি মাইনাস ৫০ এ পৌঁছেছে। তবু এই শহরের মানুষেরা যায় না কোথাও! ১৬৩২ সাল থেকে এখানে মানুষের বসবাস শুরু হয়।

সাইবেরিয়ার ইয়াকুতিয়া প্রদেশের রাজধানী এই শহরের জনসংখ্যাও সাড়ে তিন লাখেরও বেশি! অক্টোবর থেকে এপ্রিল- এই সময়টায় এখানে শীতে প্রকোপে নিশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়।

বাঁধাকপিতে যেমন পাতার অনেক স্তর থাকে। ইয়াকুৎস্ক শহরের মানুষেরাও প্রতিদিন এই বাঁধাকপির মতো পোশাক পরেন। পুরু আস্তরণযুক্ত গরম উলের তৈরি একাধিক পোশাক গায়ে চাপান তারা। বরফের মাঝে সেভাবেই কাটিয়ে দেন দিন। কিইবা করার আছে, ঘরের বাইরে কিছুক্ষণ থাকলে গোঁফ-দাড়ি-ভুরু পর্যন্ত জমে সাদা হয়ে যায়। তারপরেও এখানে বন্ধ হয় না দোকান! আবহাওয়ার অবস্থা এমন যে বিকাল তিনটায় মনে হয় রাত হয়ে গেছে। জীবন তবু থেমে থাকে না। মানুষ দিব্যি রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। দোকানে ভিড় জমান। বরফে ঢাকা রাস্তার উপর বরফে জমে যাওয়া মাছ বিক্রি করা হয়। মাছ তাজা রাখতে সেখানে কোনো রেফ্রিজারেটর প্রয়োজন হয় না।

আবার আত্মীয়-বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে যান। পার্টিও করেন। অথচ সেই সময় বরফ এতটাই কঠিন হয়ে যায়, ড্রিল মেশিনেও তাকে কাটা মুশকিল!

ঠিক কতটা প্রতিকূল থাকে আবহাওয়া? সেটা একবার ভেবে দেখা দরকার। একে তো পানি বলে কিছু নেই। সব বরফ। সুতরাং তেষ্টা মেটানোর উপায়, জমাট নদী থেকে পাত্র ভর্তি বরফ নিয়ে এসে তা গরম করে গলিয়ে পান করেন তারা।

শরীর ক্লান্তিতে ভরে যেতে থাকে। আর বিশ মিনিট পরেই মুখের পেশি থেকে আঙুল- সব অসাড় হয়ে যায়। তাই কোনোভাবেই সর্বোচ্চ আধঘণ্টার বেশি কেউ বাইরে থাকেন না। শহরের বেশির ভাগ মানুষই ট্যাক্সিতে যাতায়াত করেন। এখানকার বাড়িগুলো তৈরি হয় স্টিলের বুনিয়াদের উপরে। এগুলোর নিচের দিকে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকে।

পানি ও গ্যাসের লাইন থাকে মাটির উপরে। ইয়াকুৎস্কের মানুষ নিজেদের উৎসবের আমেজে রাখেন। রাতে হাজির হন নিইট ক্লাবে। নাচ-গানে মেতে ওঠেন তারা।

এখানকার বাসিন্দাদের টাকার অভাব নেই। আসলে সোনা, ইউরেনিয়াম ও হিরার খনির কারণে উপার্জন বেশ ভালো। তাই শহর ছেড়ে যেতে কেউই খুব একটা আগ্রহ দেখান না তারা। রাশিয়ার দ্রুত উন্নয়নশীল আঞ্চলিক শহরগুলোর মধ্যেও এগিয়ে থাকা শহর ইয়াকুৎস্ক।