গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে বাধ্য কিনা ভারত।
প্রতিবেদনের শুরুটা এমন : গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশে। এই সরকারে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নেই।
কিন্তু বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর মতো এত দিন সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশের ইউনূস সরকারকে সমর্থন করছে। দেশত্যাগী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ভারতে।
প্রশ্ন উঠেছে—বাংলাদেশ সরকার প্রত্যর্পণের আরজি জানালে ভারত কি শেখ হাসিনাকে ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য?
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছ, শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তির তেমন কোনো গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছে না ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই চুক্তি করা হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে জঙ্গি, পাচারকারী ও চোরাচালানিদের প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্যে। ২০১৬ সালে এই চুক্তিতে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছিল। কোনো দেশ যদি মনে করে, রাজনৈতিক কারণে কাউকে প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হচ্ছে, তবে তারা দাবি মানতে বাধ্য নয়।
শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি ভারত যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে মনে করে, সেখানে বলার কিছু থাকতে পারে না। আবার চুক্তির আরেকটি ধারায় রয়েছে, প্রত্যর্পণের পরে দীর্ঘ কারাবাস ও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলে অন্য পক্ষের দাবি খারিজ করা যাবে বলে প্রতিবেদনে জানা যায়।
এদিকে বিবিসি বাংলাও একটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছে। তাদের বিষয়, এখন ভারতে কোন ‘স্ট্যাটাসে’ রয়েছেন শেখ হাসিনা?
বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে দিল্লির উপকণ্ঠে একটি আধাসামরিক বাহিনীর অতিথিনিবাস বা সেফ হাউসে একসঙ্গে রাখা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে তাদের ঠিকানা কী, সেটা সরকারিভাবে কখনো প্রকাশ করা হয়নি।
শেখ হাসিনা ঠিক কোন ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে’ ভারতে রয়েছেন, সে ব্যাপারেও এখন পর্যন্ত ভারত সরকার সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে।
অর্থাৎ তিনি কোনো বিশেষ ভিসায় ভারতে অবস্থান করছেন, নাকি তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় (পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম) দেওয়া হয়েছে—এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকার আজ পর্যন্ত একটি শব্দও বলেনি।
দিল্লিতে একাধিক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে আভাস দিয়েছেন, ভারতে শেখ হাসিনার এই মুহূর্তে অবস্থানের ভিত্তিটা হলো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘সংশোধিত ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট’।