চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায় তাই ভাবছেন? এমনটি যদি হয়ে থাকে তাহলে আপনি একেবারে ঠিক পোস্টটিই পড়া শুরু করেছেন। হ্যাঁ এই পোস্টে আমি বাড়তি আয়ের পনেরোটি অভাবনীয় আইডিয়া দেব যা থেকে আপনিও চাইলে আপনার চাকরির পাশাপাশি আয় বাড়াতে পারেন। আইডিয়াগুলো অনলাইন ও অফলাইন ভিত্তিক তাই আপনি যে ঘরানার মানুষই হোন না কেন, কোন না কোন কাজ আপনার পছন্দ হবেই।
তাহলে চলুন আর দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক পনেরোটি অভাবনীয় আয়ের উৎস কি কি সে সম্পর্কে।
১. ফ্রিল্যান্সিং : ফ্রিল্যান্সিং বলতে আমাদের দেশে আউটসোসিং কেই ফ্রিল্যান্সিং বলে। একটু ভেঙে বলতে গেলে কোন এক ব্যক্তি তার প্রয়োজনীয় কাজসমূহ আপনাকে দিয়ে করাবে এবং তার মাধ্যম হিসাবে সে অনলাইনে আপনার সাথে যোগাযোগ থেকে শুরু করে পেমেন্টও এই অনলাইনের মাধ্যমেই করবেন। আমাদের দেশে ডলার আয় করার পেছনে ফ্রিল্যান্সিং এর বড় একটা অবদান রয়েছে। তাই আপনি চাইলেই আপনার চাকুরীর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের মাধ্যম হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং এর হাজারো স্কিলস এর মধ্যে থেকে যেকোনো একটিতে দক্ষ হয়ে আপনিও ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দিতে পারেন। রাইটিং, ডিজাইনিং, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স কাজগুলো আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়, তাই এগুলোর যেকোনো একটি ট্রাই করে দেখতে পারেন।
২. ব্লগিং : ব্লগিং মানে এককথায় যেটি বোঝায় সেটি হল লেখালিখি।ভার্চুয়াল জগতে এমন অনেক সাইট আছে যেখানে আপনি লেখালিখির সাহায্যে খুব সহজেই ঘরে বসেই অল্প সময়ে আয় করতে পারবেন। আমার দেখা এমন অনেকেই আছে যারা চাকুরি অথবা পড়াশুনার পাশাপাশি ব্লগিং করে আয় করে থাকে। তাছাড়া এই ব্লগিং এর জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারন না থাকায় আপনি যেকোন সময় তা করতে পারেন। ব্লগিং আপনার চাকরির পাশাপাশি এমন একটি আয়ের মাধ্যম হতে পারে যা একবার দাঁড়িয়ে গেলে আপনার আর কোন কিছু নাও করা লাগতে পারে। এটি এজন্য যে ব্লগিং থেকে অনেক আয় করা যায়, কিন্তু একটি ব্লগকে ভালো একটি অবস্থানে নিতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। সেই সময় টুকু যদি আপনি ধৈর্য সহকারে দিতে পারেন তাহলে দেখতে পারবেন যে আপনি অনেক আয় করতে পারছেন।
৩. এফিলিয়েট মার্কেটিং : অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি জনপ্রিয় পেশা এবং আপনি চাইলে অন্য যে কোন চাকরির পাশাপাশি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ব্লগিং এর সাথে সাথেই করা যায় আবার আপনি চাইলে ব্লগিং ছাড়াই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে কারণ অনলাইনে প্রায় প্রত্যেকটি কম্পানি তাদের প্রোডাক্টের জন্য অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু রাখে। আর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যে এখানে আপনি ফ্রি সম্পূর্ণ কাজ শুরু করতে পারবেন কারণ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হতে কোন টাকা খরচ হয় না।
৪. ইউটিউবিং : আপনি চাইলে ইউটিউবিং শুরু করেও আপনার চাকুরীর পাশাপাশি আয় করতে পারেন। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় যে অনেকেই ইউটিউব চ্যানেল খুলে তা থেকে ব্যাপক আয় করছে। ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করতে আপনার শুধু দরকার ভালো ভিডিও তৈরি করা। একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে শুরু করে দিন ইউটিউবে ভিডিও পাবলিশ করা এবং আয়ের পথে আরো একধাপ এগিয়ে যান।
৫. ফেইসবুক : আপনি চাইলে ফেইসবুক কে একটি money-making প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। ফেসবুকে আপনি শুধু ফ্রেন্ড এর সাথে আপনার তথ্য আদান-প্রদান না করে তা থেকে বিভিন্ন ভাবে আয় শুরু করতে পারেন। তো সেটা কিভাবে করা যেতে পারে? এটা করা যেতে পারে ফেসবুকে আপনার একটি অনলাইন শপ খোলার মাধ্যমে। আপনি আপনার অনলাইন শপের জন্য একটি ফেসবুক পেইজ ওপেন করুন এবং সেখানে আপনার বিভিন্ন প্রোডাক্ট শেয়ার করতে থাকুন। আপনার কানেকশনস যতই বাড়তে থাকবে ততই দেখবেন যে আপনার প্রোডাক্ট বিক্রির সংখ্যা বেড়ে গেছে। এছাড়াও আপনি ফেসবুকে গ্রুপ তৈরি করতে পারেন এবং পরবর্তীতে ওই গ্রুপটিকে বিভিন্নভাবে মনিটাইজ করতে পারেন।
৬. ই-কমার্স : ইন্টারনেটভিত্তিক কেনাকাটার জন্য ই-কমার্স সাইটের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তবে আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্স ব্যবসায় অনেকেই প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন বলে এ থেকে অনেকের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এর মধ্যেও আপনার সুযোগ রয়েছে আর সেটি হলো এই যে আপনি সৎ ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেলে মানুষ আপনার ওপর আস্থা রাখতে পারবে। যদি গ্রাহকরা অগ্রিম পেমেন্ট করতে ভয় পায় তাহলে আপনি ক্যাশ অন ডেলিভারির ব্যবস্থা রাখতে পারেন যাতে করে ক্রেতারা আগে পণ্যটি পেয়ে যাচাই করে তারপর টাকা দিতে পারবে। এখন আপনাকে চিন্তা করতে হবে যে আপনি কোন কোন পণ্যের ওপর ই-কমার্স শুর করবেন। আপনার পছন্দের আইটেমগুলো শুরু করে দিতে পারেন ই-কমার্স এর যাত্রা।
৭. এডসেন্স : এই লিস্টের দ্বিতীয় নাম্বারে যে ব্লগিং নিয়ে আলোচনা করছিলাম তা থেকে আয় করার জন্য এডসেন্স খুবই জনপ্রিয় তাই এটিকে আলাদা পয়েন্ট আকারে দিলাম। এডসেন্স এর মাধ্যমে শুধু ব্লগিং করে নয় বরং ভিডিও বানিয়েও তা থেকে আয় করা যায়। সবথেকে বড় গুগলের এই এড নেটওয়ার্কে বিভিন্ন কম্পানি তাদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করার জন্য সাবমিট করে থাকে। গুগল ৬৫% যাদের ব্লগ বা ভিডিওতে এই বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয় তাদেরকে এবং বাকি ৩৫% নিজে কেটে নেয়। এভাবে রেভিনিউ শেয়ারিং এর মাধ্যমে গুগলও লাভবান হয় আবার একজন পাব্লিশার হিসেবে আপনিও লাভবান হতে পারবেন।
৮. ওয়েবসাইট ফ্লিপিং : সোজা ভাষায় ওয়েবসাইট ফ্লিপিং হলো ওয়েবসাইট তৈরি করে তা বিক্রি করা। ধরেন আপনি একটি ব্লগ তৈরি করলেন এবং এতে বেশকিছু আর্টিকেল লিখে পাব্লিশ করলেন। কিছুদিন পর যখন এসব আর্টিকেল গুগলে র্যাংক করবে তখন আপনার ওয়েবসাইটটির মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এভাবে একসময় আপনার ওয়েবসাইটের মূল্য তৈরি করতে যা খরচ হয়েছে তার থেকে অনেক বেড়ে যাবে আর তখন আপনি তা বিক্রি করে ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
৯. ডিজিটাল/ফিজিক্যাল প্রডাক্ট সেলিং : অনেক অনেক ডিজিটাল প্রডাক্টস ও ফিজিক্যাল পণ্য রয়েছে যেগুলো আপনি পাইকারি দামে কিনে তা খুচরা দামে বিক্রি করতে পারেন এই যেমন খাঁটি মধু বা এরকম কিছু আপনি পাইকারি কিনে বোতলে করে খুচরা বিক্রি করে আয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার অফিস কলিগ বা পরিচিতদের মাঝে আপনার প্রডাক্ট সম্পর্কে জানালে অনেকেই তা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। এছাড়াও তা অনলাইনে প্রচার করে বেশি বেশি বিক্রি করতে পারেন। কোন ডিজিটাল প্রডাক্টের মধ্যে রয়েছে হোস্টিং রিসেল করা যদিও এ ব্যাপারটি বুঝতে গেলে আপনাকে এ নিয়ে কিছুটা স্টাডি করতে হবে। হোস্টিং রিসেল হল পাইকারি মূল্যে হোস্টিং প্যাকেজ কিনে তা পরে ছোট ছোট প্যাকেজে বিক্রি করা।
১০. ড্রপ শিপিং : ড্রপ শিপিং বলতে মাধ্যম হিসেবে কাজ করা। যেমন Daraz.com, Bikroy.com ইত্যাদি এই ব্যবসা বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে খুব জনপ্রিয় একটা অনলাইন ব্যবসা। আপনি চাইলে খুব সহজেই ঘরে বসে এই জনপ্রিয় ব্যবসা করে চাকরির পাশাপাশি আয় করতে পারেন। যদিও দারাজ ও বিক্রয় অনেক বড় অনলাইন প্লাটফর্ম তথাপি আপনি ছোট পরিসরে ড্রপশিপিং করে একটা অবস্থানে যেতে পারেন।
১১. বিক্রয়.কম : আমাদের দেশে বিক্রয় ডট কম আপনার জন্য একটি খুবই সুখবর হতে পারে কারণ এখানে সেলার একাউন্ট খুলে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট সেল করা যায়। Bikroy.com এ আপনার প্রোডাক্ট সেল করতে আপনার কোন ফিজিক্যাল শপ না শুরু করলেও চলছে। আপনি আপনার বাসাতেই বিভিন্ন প্রোডাক্ট এনে রাখতে পারেন অথবা আপনি প্রডাক্ট না রেখেই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। হ্যাঁ আপনি বিভিন্ন প্রডাক্ট এর অ্যাড bikroy.com এ আপনার অ্যাকাউন্টে দিয়ে দিন। এরপর যখনই কেউ অর্ডার করবে তখন আপনি সেই পণ্য মার্কেট থেকে কিনে আপনার কাস্টমারকে ডেলিভারি করুন। এভাবে আপনার অনেক টাকা বেঁচে যাবে আবার পণ্য মজুদ রাখার ঝামেলাও পোহাতে হবে না।
১২. সান্ধ্যকালীন কোচিং অথবা অন্য কোনো ব্যবসা : সাধারণত অধিকাংশ চাকুরী সন্ধ্যা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তো সন্ধ্যার পর এই সময়কে আপনি কাজে লাগাতে পারেন। আপনি চাইলে সান্ধ্যকালীন কোন কোচিং অথবা অন্য কোন ব্যবসায় আপনার সময়টি দিতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্য আপনি আপনার পরিবারের সাথে অনেকটাই ডিটাচ হয়ে যাবেন। তো দেখুন এমন কোন ব্যবসা আছে কিনা যেখানে সন্ধ্যার পর সময় দিতে পারেন অথবা আপনি আপনার মেধা কাজে লাগিয়ে একটি কোচিং শুরু করে সেখানে শিক্ষার্থীদের পড়াতে থাকতে পারেন। আরেকটি কাজ করতে পারেন আর তা হল এই যে আপনি কোন সাবজেক্টে পারদর্শী হলে তার ওপর অনলাইনেই কোচিং করাতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে অফিসের পর আর বাসার বাইরে থাকতে হচ্ছে না। তবে একটি নির্দিষ্ট সময় নিয়ে স্টুডেন্টদের পড়াতে হবে।
১৩. জমিতে বা অন্য কোনো এসেট এ বিনিয়োগ : জমিতে বিনিয়োগ এখনকার একটি লাভজনক ব্যবসা। আপনি চাইলে কোন ফিক্সড অ্যাসেট যেমন জমি বা অন্য কোন অ্যাসেট এ আপনার অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। এ থেকে আপনি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর মুনাফা লাভ করতে পারেন। এটি একটি long-term প্লান কারণ আপনি যখন একটি জমি কিনবেন সেই জমিটি কয়েক বছর পর না বেচলে হয়তো বা তা থেকে আপনি তেমন একটি লাভ করতে পারবেন না।
১৪. বাসার ছাদ বা উঠোনে নার্সারি : নার্সারিকরণ আজকাল একটি ভালো ইনকামের মাধ্যম হতে পারে। এটি যেমন একটি সখের বিষয় আবার অপরদিকে একটি লাভজনক ব্যবসাও হতে পারে। তো দেখুন আপনার বাসার ছাদে বা উঠোনে যদি কিছুটা জায়গা থেকে থাকে সেখানে আপনি লাভজনক কিছু গাছ চাষ করতে পারেন। আজকাল ফুল এর ব্যাপক চাহিদা আছে আপনি দেখতে পারেন যে কোন ধরনের ফুল চাষ করা সুবিধাজনক এবং একই সাথে লাভজনক। এরকম কিছু ফুলের চাষ করে আপনি আপনার চাকরির পাশাপাশি ভালো আয় করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে আগে জেনে নিতে হবে যে কিভাবে ফুল বা গাছ চাষ করতে হয়।
১৫. পশু-পাখি পালন : এছাড়া পশুপালন ও হতে পারে আপনার চাকুরীর পাশাপাশি আর একটি আয়ের উৎস। অনেক পশু আছে যেগুলো পালন করা খুব একটি কঠিন কাজ নয় আবার ভালো আয়ও করা যায়। আপনি একটু দেখুন যে আপনার কোন ধরনের পশু পালতে ভাল লাগে। সেই ধরনের পশু আপনি লালন-পালন করা শুরু করতে পারেন। তো এই হলো চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে আয় করার উপায়। আপনি এর মধ্যে থেকে যে কোন এক বা একাধিক কাজ বেছে নিন ও আপনার চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয় করতে থাকুন। এখানে অনেক কাজ অনলাইন ভিত্তিক আবার অনেক কাজ অফলাইনেই করা যায়। অনলাইন কাজগুলো আমি বেশি প্রিফার করি কারণ সেক্ষেত্রে আপনাকে তেমন কোন ইনভেস্ট করতে হবে না। অন্যদিকে অফলাইনের কাজগুলো ইনভেস্টমেন্ট নির্ভর তাই সেক্ষেত্রে রিস্ক ও বেড়ে যায়