ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনি নিহত যুবকের পরিচয় মিলেছে। তার নাম তোফাজ্জল হোসেন। বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলাতে।
জানা গেছে, নিহত তোফাজ্জল প্রেমঘটিত কারণে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তিনি পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এমনটাই দাবি করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান আল ইমরান।
স্ট্যাটাসে তোফাজ্জলের বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করে ইমরান লিখেন, ‘এই ছেলেটির নাম তোফাজ্জল। আমার জন্মস্থান বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার সন্তান। তোফাজ্জল পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। এই ছেলেটি বেশ সজ্জন, পরোপকারী ও নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন ছাত্রনেতা ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় প্রথমে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারায়। এর কিছুদিনের মধ্যে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যান। তোফাজ্জল পরিবার ও অবিভাবক শূন্য হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে গত ৩/৪ বছর ধরে। বিগত ২/৩ বছর তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াত। আমাদের এলাকার যারা ওরে চিনতো সবাই সহযোগিতা করতো। ক্যাম্পাসে আমাকে দেখলেই দৌড়ে এসে কুশল বিনিময় করতো। আমি দেখা হলে ওরে খাবার খেতে বলতাম বা খাওয়ার জন্য টাকা দিতাম অথবা ও মাঝে মধ্যে চেয়ে নিত। খাবার ও খাবার টাকার বাইরে ওর তেমন কোনো চাহিদা ছিলো না।
হয়তো আজকেও খাবারের জন্য ও এফএইচ হলে গিয়েছিলো।
ঐ স্যাটাসে আরিফুজ্জামান আল ইমরান আরো উল্লেখ করেন, ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেখার পর স্ট্যাটাস দেওয়া ব্যক্তিকে ইমরান ফোন দেন এবং জানায় ঐ ব্যক্তি তার এলাকার। বর্তমানে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন, হয়তো খাবারের সন্ধানে গিয়েছিল যেন তাকে মারধর না করা হয়। অপর প্রান্তের ঐ ব্যক্তি ইমরানকে জানায় যে তাকে মারধর করা হবে।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান আল ইমরান ঐ স্ট্যাটাসে লিখেন, ২ ঘণ্টার ব্যবধানে ফেসবুকে দেখি তোফাজ্জল এফএইচ হলের শিক্ষার্থীদের নির্মম নির্যাতনে মারা গিয়েছে। আহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! ছাত্র নামধারী বিবেকহীন এই নরপিশাচদের জন্য আজকে একটি নিরপরাধ প্রাণ চলে গেলো, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলঙ্কিত হলো!
এমন মৃত্যুর ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়ায় লড়ে যাবেন বলে উল্লেখ করে তিনি লিখেন, তোফাজ্জল হত্যার বিচার চাওয়ার মতো ওর পরিবারে অবশিষ্ট আর কেউ নেই। তবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচার নিশ্চিত করতে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়ে যাবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় হলের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হবে।