গভীর সমুদ্রে ইলিশ মাছ ধরতে গিয়ে জালে ধরা পড়ল দুর্লভ প্রজাতির একটি মাছ। যার দাম হাঁকা হচ্ছে ২৭ লাখ টাকা। বাদল হোসেন নামের এক মাঝির জালে ধরা পড়ে দুর্লভ এই মাছ। তিনি মাছটি নিয়ে আড়তে আসার পর বুঝতে পারেন এটি একটি দুর্লভ প্রজাতির মাছ।
নাম সোনালী হাইতি ভোল মাছ। মাছটি নিয়ে পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর পারেরহাট মৎস্য বন্দরের আড়তে চলছে দরদাম। তবে কম দামে মাছটি বিক্রি করতে নারাজ জেলে বাদল হোসেন। গত রবিবার রাতে গভীর সমুদ্রে থেকে বিরল প্রজাতির এই মাছটি ধরা পড়ে।
জেলে বাদল বলেন, ১০ দিন আগে আমি সাগরে মাছ ধরতে যাই। রবিবার রাতে ইলিশ মাছ ধরার জালে এই মাছটি ধরা পড়ে। সোনালী হাইতি ভোল মাছটি পেয়েই আমি পাড়েরহাট আড়তে ফিরে আসি। আড়তে এসে বরফ দিলে ধীরে ধীরে মাছটিতে সোনালী আকার ধারণ করে।
তখন আমি বুঝতে পারি এ মাছটি দুর্লভ প্রজাতির সোনালী হাইতি ভোল মাছ। মাছটির ওজন ৩২ কেজি ৮০০ গ্রাম। মাছটি পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর পাড়েরহাট মৎস্য বন্দরের জাহিদ হোসেনের আড়তে আছে। মাছটি বিক্রির জন্য দরদাম চলছে।
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, এই মাছের বায়ুথলির (বালিশ) আন্তর্জাতিক বাজারে খুব চাহিদা, আর এর দামও খুব বেশি।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের বরাতে জানা গেছে, এটা পোয়া জাতীয় সামুদ্রিক মাছ। বাংলাদেশে এদের লাল পোয়া বলা হয়ে থাকে। ভারতে এদেরকে তেলিয়া বা গোল্ড পোয়া বলা হয়। যার বৈজ্ঞানিক নাম প্রোটোনিবিয়া ডায়াকানথুস।
এদিকে এই প্রজাতির মাছ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোল মাছ হলো এক প্রকার ওষধি মাছ। এই মাছ একদিকে যেমন ওষুধ হিসেবে কাজ করে তেমনি খেতেও খুব সুস্বাদু। ভোল মাছের পুরো শরীরই ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ভোল মাছের পটকা থেকে কিডনি রোগ নিরাময়ের ওষুধ তৈরি করা হয়। এই ওষুধ দিয়ে কিডনির কার্যকারিতা বজায় রাখা হয়। কিডনির পাথর নিরসনে ব্যবহৃত হয় ভোল মাছের পটকায় থাকা রস।
ভোল মাছের হৃদয় মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভোল মাছের হৃদয়ে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্টসহ নানাবিধ পুষ্টি উপাদান। এটি রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিবেচিত। তাই এ মাছের হৃদয়কে সোনার হৃদয়ও বলা হয়।
ভোল মাছের শরীর নানা পুষ্টি উপাদান ও খনিজ পদার্থে ভরপুর। এই মাছের শরীর থেকেই এমন বিশেষ ধরনের সুতো তৈরি হয় যা দিয়ে মানবদেহে সেলাই করলে ঘা শুকানোর পর সুতো শরীরের সঙ্গে মিশে যায়। এই ভোল মাছ থেকে দামি মদ তৈরি করা হয়। সর্বোপরি ওষুধ তৈরিতেই এই মাছ সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই বিশ্বের নামী দামি ওষুধ কম্পানির কাছে এই মাছের রয়েছে বিশেষ চাহিদা।
কিন্তু এই মাছ সমুদ্রে খুব সহজে পাওয়া যায় না। বলা চলে, এটি একটি দুর্লভ মাছ। সে কারণে এই মাছের দামও বেশি। স্ত্রী ভোল মাছের চেয়ে পুরুষ ভোল মাছের দাম আরো বেশি হয়।
ভোল মাছ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এই দেশগুলোর মানুষের কাছে অনেক পছন্দনীয় খাবার। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে এই ভোল মাছ মাঝে-মধ্যে হঠাৎ করেই অনেক সময় জেলেদের জালে আটকা পড়ে।
ইন্দুরকানী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, এদের পেটের মধ্যে পোটকা বা ফৎনা মাছের (বায়ুথলি) আন্তর্জাতিক বাজারে খুব চাহিদা ও উচ্চ দাম রয়েছে। এই মাছের বায়ুথলী আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি ৫ থেকে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি হয়।
এসব বায়ুথলি সাধারণত মেডিক্যাল সামগ্রী যেমন কসমেটিক সার্জারির সুতা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া দামী বিদেশি মদ তৈরিতেও এই মাছ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
Priyo Bangla 24 – Most Popular Bangla News The Fastest Growing Bangla News Portal Titled Priyo Bangla 24 Offers To Know Latest National And Local Stories.
