আল্লাহর কাছে বিচার দেব আমার মেয়েটা কী দোষ করেছে

চট্টগ্রামে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুমড়েমুচড়ে তিনজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বোয়ালখালীতে সিগন্যাল অমান্য করে একইসঙ্গে ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহন কালুরঘাট সেতুতে উঠে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে শিশু মেহেরুমা নুর আয়েশা, অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ তুষারসহ মোট তিনজন মারা গেছেন।

নিহত আয়েশা চট্টগ্রামের বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সাজ্জাদুর নূরের মেয়ে এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মোহাম্মদ তুষার বোয়ালখালী উপজেলার বাংলা পাড়ার মুহাম্মদ আবুল মনসুরের একমাত্র ছেলে। নিহত আরেকজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। 

এই দুর্ঘটনায় সন্তান হারানোর শোকে আহাজারি করে মেহেরুমা নুর আয়েশার বাবা সাজ্জাদুন নূর বলেন, আমার মেয়েটা কী দোষ করেছে। আমি হয়তো গুনাহ করেছি, আমার ৩০ বছর বয়স হয়েছে। আমার দুই বছরের বাচ্চাটা কী করেছে।

একটি পানি বোতল দেখিয়ে সাজ্জাদুন পেশায় গ্রাফিকস ডিজাইনার সাজ্জাদুন নূর চোখে জল, মুখে কাঁপা কণ্ঠে বারবার উচ্চারণ করেন, মেয়েটা পানি খেতে চেয়েছিল। তাই বোতল কিনেছি। এখন সব শেষ। ও আমার আয়েশা, তুই কোথায় গেলিরে।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন মো. সাজ্জাদুর নূর ও জুবাইরা ফেরদাউস ইসরা। তাদের ঘর আলোকিত করে পৃথিবীতে আসে মেহেরুমা নুর আয়েশা। সাদা টি-শার্ট ও কালো চশমা পরিয়ে আয়েশার সঙ্গে গত ৪ মার্চ ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়েছিল মা ইসরা। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, তুমিই আমার জীবনের একমাত্র সঙ্গ। এরপর ভালোবাসার দুটি ইমোজি দিয়েছিলেন তিনি। যেই সেতু নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন মা, সেখানেই মারা গেল তার সন্তান। 

আয়েশা ছিল সাজ্জাদুন নূর-জুবাইরা ফেরদাউস ইসরা দম্পতির একমাত্র সন্তান। বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন সাজ্জাদুন। পরিবার নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে বোয়ালখালী উপজেলার পূর্বগোমদণ্ডী ইউনিয়নে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন তারা।  

রাতে ফেসবুকজুড়ে ভাইরাল হয় দুর্ঘটনার পরবর্তী একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, ট্রেনে চাপা পড়ে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া অটোরিকশা থেকে একটি শিশুকে কোলে নিয়ে বের হন ৩০ বছর বয়সী এক যুবক। তিনি চিৎকার করে বলেন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। 

সাজ্জাদুনের চাচাত ভাই কাউসার বাপ্পি রাত আড়াইটায় জানান, রাতেই তারা আয়েশার মরদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।

এর আগে, পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে ছেড়ে এসেছে ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে। ট্রেনটি বোয়ালখালী অংশ থেকে শহরের দিকে ব্রিজ পার হয়ে আসার সময় সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিগন্যাল না মেনেই সেতুর ওপরে উঠে যায় অটোরিকশাসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন। বিপরীত দিকে সিগন্যাল অমান্য করে দ্রুত গতিতে আসা ওই ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সেখানে আরও কয়েকটি মোটরসাইকেলও ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে।

আবদুল মান্নান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কালুরঘাট ব্রিজটি একমুখী। ট্রেন চলাচলের সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ট্রেন আসছে এ কারণে সিএনজি অটোরিকশাসহ যানবাহনগুলোকে ব্রিজে না ওঠার জন্য সিগন্যাল দেওয়া হয়। এরপরও গাড়িগুলো সিগন্যাল অমান্য করে ব্রিজে উঠে যায়। অপর প্রান্ত থেকে ট্রেন এলে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকটি যানবাহন দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এসব গাড়িতে থাকা যাত্রী হতাহত হয়েছে।

তবে গুমদণ্ডী রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার আজম উদ্দিন জানান, নিয়ম হলো ট্রেন পূর্ব প্রান্তে এসে দাঁড়াবে। এরপর লাইনম্যানের সংকেত নিয়ে সেতুতে উঠবে। কিন্তু ট্রেনচালক এ নিয়ম না মেনে দ্রুতগতিতে সেতুতে উঠে যান। এ সময় উল্টো দিক থেকে গাড়ি আসার কারণে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।